বৃহস্পতিবার ১৪ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

এবি ব্যাংক গ্রাহকের সন্তুষ্টি অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ: সৈয়দ মিজানুর রহমান, ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এবি ব্যাংক পিএলসি

  |   বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫   |   প্রিন্ট   |   139 বার পঠিত

এবি ব্যাংক গ্রাহকের সন্তুষ্টি অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ: সৈয়দ মিজানুর রহমান, ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এবি ব্যাংক পিএলসি

এবি ব্যাংক গ্রাহকের সন্তুষ্টি অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ: সৈয়দ মিজানুর রহমান, ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এবি ব্যাংক পিএলসি

‘দেশের তালিকাভুক্ত প্রথম বেসরকারি ব্যাংক এবি ব্যাংক। বিগত সরকারের আমলে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় ব্যাংকটি। গতবছর ব্যাংকটিকে লাল তালিকাভুক্ত করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একদিকে রাজনৈতিক বিবেচনায় বিতরণকৃত ঋণের সিংহভাগ খেলাপি। অন্যদিকে লাল তালিকাভুক্ত হওয়ার কথা প্রচার হলে আমানতকারীদের টাকা তোলার হিড়িক পড়ে। স্বাভাবিক কারণে একটু চাপেই ছিল চার দশক ধরে দেশের ব্যাংকিং সেবায় নিয়োজিত ঐতিহ্যবহনকারী ব্যাংকটি। তবে, যত চাপই থাকুক; যত খারাপ অবস্থা থাকুক এখন পর্যন্ত কোন আমানতকারী এবি ব্যাংকে এসে কোন সমস্যায় পড়েননি। আমানতকারীরা তাদের প্রয়োজন মতো তাদের জমানো টাকা যে কোন সময় যে কোন অবস্থায় তুলে নিচ্ছেন। আমরা গ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্ন সেবা প্রদান অব্যাহত রেখেছি। এবি ব্যাংক গ্রাহকের সন্তুষ্টি অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ কথাগুলো বলছিলেন ব্যাংকটির ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ব্যাংকের ঋণ থাকবেই, ঋণ থাকলে খেলাপিও থাকবে। আমরা ব্যাংকিং সিস্টেমে যেভাবে ঋণ আদায় করতে হয় তার সব পদক্ষেপ এপ্লাই করছি। পাশাপাশি আইনি প্রক্রিয়া চলছে। তাছাড়া আমাদের থার্ড পার্টি রিকোভারি টিম কাজ করছে। খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে ব্যাংকের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এই বছরের মধ্যে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার বেশ কিছু পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।

সৈয়দ মিজানুর রহমান ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে এবি ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। এর আগে একই বছরের ১৩ আগস্ট তাকে এবি ব্যাংক পিএলসির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) পদে উন্নীত করা হয়। এই পদোন্নতির আগে তিনি ২০২২ সালের জুন থেকে ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ২০১১ সালের মার্চ মাসে ব্যাংকে যোগদান করেন তিনি। সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারে বর্তমানে ব্যাংক খাতের সার্বিক সংকট; এই সংকট থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে এবি ব্যাংককে কিভাবে আরো এগিয়ে নেওয়া যায় সেসব পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। রাজনৈতিক প্রভাবে অবাধ লুটপাটের মধ্যেও ব্যাংকের সার্বিক পরিস্থিতি কেমন আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের যথাসময়ে ব্যবস্থা নেয়ার ফলে যতখানি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করেছিলাম, ততটা ক্ষতিগ্রস্ত হইনি। বরং আমাদের প্রবৃদ্ধি অনেক ভালো। চলতি বছর শেষে ব্যাংকটি কিছুটা হলেও স্বাভাবিক গতিতে ফিরবে বলে আমি মনে করি। আমরা এখন আশাবাদী, গতবছর ব্যাংকগুলোর একীভূতকরণ নিয়ে যে সংকট তৈরি হয়েছিল এবছর শেষে তা থাকবে না।”

মিজানুর রহমান বলেন, “পুরো ব্যাংক খাত চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে এগোচ্ছে, আশার কথা হলো ছয় মাস আগে যে অবস্থা ছিল এখন আর সে অবস্থায় নেই। সবাই ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। অন্যান্য ব্যাংকের মতো এবি ব্যাংকও চ্যালেঞ্জের মুখে ছিল এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে অন্য ব্যাংকের মত এবি ব্যাংকে টাকা তুলতে এসে কেউ কখনো ফেরত যাননি। ব্যাংকের ৩০ শতাংশ ঋণ খেলাপি হয়ে আছে। এসব আদায়ে আইনি ও অন্যান্য পদক্ষেপ চলছে, এ বছরের মধ্যে এর ফলাফল দেখা যাবে। এখন আমানত বাড়াতে নতুন আমানত পণ্য চালু করা হয়েছে।” এবি ব্যাংক তার সুনাম ধরে রাখতে পারবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।

সৈয়দ মিজানুর রহমান বলেন, “রাজনৈতিক বিবেচনায় ঋণ কমবেশি সব ব্যাংকই দিয়েছে। এসব বিষয়ে তদন্ত চলছে, সংস্কার কার্যক্রম চলমান।”
ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মিজানুর রহমান বলেন, “রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও ব্যাংক খাতের ওপর অনাস্থার কারণে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এবি ব্যাংক একসময় ব্র্যান্ড ব্যাংক ছিল, সেটা এবি ব্যাংক ধরে রাখার চেষ্টা করছে। সারা দেশে ব্যাংকের উপস্থিতি আছে। আমরা সারা দেশে নতুন উদ্যোমে ব্যাংকিং সেবা ছড়িয়ে দিতে চাই।”
তিনি বলেন, “আমরা চাই গ্রাহকদের গুণগত সেবা দিতে। এই লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন উদ্যোগ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। ইতিমধ্যেই নতুন কিছু সেবা পণ্য গ্রাহকদের জন্য নিয়ে এসেছি। এগুলোর মধ্যে এবি কোটিপতি ডিপোজিট স্কিম; মাসিক সঞ্চয়ের ভিত্তিতে যেকোনো আমানতকারীকে কোটিপতি হওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে; যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এই হিসাব খুলতে পারবেন। ৫ থেকে ২০ বছর মেয়াদে কোটিপতি হিসাব খোলা যাবে, সে হিসাবে প্রতি মাসে টাকা জমা দিতে হবে। এবি স্বাচ্ছন্দ্য নামে চলতি হিসাব; যেখানে গ্রাহকেরা দৈনিক স্থিতির ওপর যত বেশি ডিপোজিট তত বেশি আকর্ষণীয় মুনাফা পাবেন। এই হিসাবধারী চাকরিজীবীদের অন্য ব্যাংকে বেতন হলেও তার ৬০ শতাংশ পর্যন্ত টাকা ওভারড্রাফট নিতে পারবেন। এবি সম্পূর্না হলো নারী গ্রাহকদের জন্য বিশেষ সঞ্চয়ী হিসাব; যেখানে ২০ হাজার টাকা থেকে আকর্ষণীয় মুনাফা এবং ফ্রি ইন্সুরেন্স সুবিধা। এছাড়াও লকার চার্জে আছে ২৫ শতাংশ ছাড়। ‘এবি নিশ্চিন্ত’ ফিক্সড ডিপোজিটে পাচ্ছেন আকর্ষণীয় মুনাফার সাথে ৮০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ফ্রি জীবন বীমা সুবিধা। ‘এবি ইলহাম’ ইসলামি শরিয়াহভিত্তিক আমানত হিসাব দিচ্ছে ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিককে দৈনিক স্থিতির ওপর আকর্ষণীয় মুনাফা লাভের সুযোগ। ব্যক্তি ও যৌথ নামে এই হিসাব খোলা যাবে। ন্যূনতম ২৫ হাজার টাকা জমা দিয়ে এই হিসাব খুলতে হবে। ‘এবি আমানী’ ইসলামি শরিয়াহভিত্তিক আমানত হিসাব হলো নারী গ্রাহকদের জন্য বিশেষ সঞ্চয়ী হিসাব, যেখানে ২০ হাজার টাকা থেকে আকর্ষণীয় মুনাফা। এছাড়া ডিপোজিট ডাবল স্কিমে মাত্র ৫ বছর ৬ মাসেই টাকা দ্বিগুণ করার সুযোগ। মান্থলি ইনকাম ডিপোজিট স্কিমে প্রতি লাখে হাজার টাকা মুনাফা প্রতি মাসে।’

এবি ব্যাংকের এমডি বলেন, “মূলত ব্যাংক একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, যার মূল লক্ষ্যই হলো মুনাফা বৃদ্ধি করা। তবে এই মুহূর্তে আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা। এজন্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসরণ করে ঋণ পুনঃতফসিল করছি। এতে নন পারফর্মিং অনেক লোন আবার সচল হবে এবং ব্যাডলসের পরিমাণ কমে আসবে। তবে আগে যেমন রাজনৈতিক বিবেচনায় ঋণ পুনঃতফসিল করা হতো এখন আর তা হতে দেওয়া হবে না। প্রকৃত ব্যবসায়ীদেরকেই এই সুযোগ দেওয়া হবে।”

ঋণ বিতরণেও সাবধানতার কথা জানান অভিজ্ঞ এই ব্যাংকার। তিনি বলেন, “এখন আপাতত কর্পোরেট কোন ঋণ আমরা দিচ্ছি না। ঋণ বিতরণে এখন আমরা কৃষি, এসএমই এবং অন্যান্য নিশ্চিত নিরাপদ খাতগুলোকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি। রাজনৈতিক কিংবা কোন রেফারেন্স নয় প্রকৃত ব্যবসায়ী কি-না এবং আদায় করার ক্ষমতা ব্যাংকের আছে কি-না তা যাচাই করেই ঋণ দেওয়া হবে। এমডি বলেন, “ওভার বরোড কোম্পানিগুলোকে, যাদের কোন নগদ প্রবাহ নেই, লেনদেন নেই অথচ ঋণের কিস্তি বিরাট তাদের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক যে নির্দেশনা দিবে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কারণ এই সমস্যা শুধু আমাদের না বাংলাদেশের অধিকাংশ ব্যাংকের।
সবশেষে এবি ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত এমডি বলেন, “ব্যাংক একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান, “আমানতকারীর সঞ্চয় জমা রেখে গ্রহীতাকে ঋণদানের মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করে। ব্যাংকে জমানো টাকা দাবি অনুযায়ী চাহিবামাত্র পরিশোধ করা একটি ব্যাংকের নিকট গ্রাহকের মূল চাওয়া।”এবি ব্যাংক সেটি যথাযথভাবে পালন করেছে।

তিনি বলেন, “যেহেতু ব্যাংক হলো ধার ও ঋণের ব্যবসায়ী। তাই আমানত হিসেবে সংগৃহীত অর্থ ঋণ হিসেবে প্রদান করে। উপযুক্ত খাতে ঋণদান ও তা যথাসময়ে সংগ্রহ করা সব ব্যাংকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ঋণ দিলে অনেক সময় নানা কারণে খারাপ ঋণ এ পরিণত হয়। সেক্ষেত্রে ব্যাংকের সাময়িক ক্ষতি হতে পারে এজন্য শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, আমাদের সম্পদের দ্রুত থেকে দ্রুত সঞ্চালন উপযুক্ত খাতে করতে পারলে ব্যাংকের ঘুরে দাঁড়াতে খুব বেশি সময় লাগবে না। এটি আমাদের পারতে হবে। তবে একটি কথা বলে রাখি এটি কোন ফুটবল ম্যাচ নয় যে রাতারাতি একটা ফলাফল হয়ে যাবে। একটি কথা বলবো আমাদের গৃহীত পদক্ষেপ ফল দিতে শুরু করেছে, যা দৃশ্যমান হতে সময় লাগবে। এবি ব্যাংক দ্রুতই স্বমর্যাদা উদ্ধার করবে এবং সবার ব্যাংক হিসেবে সমাদৃত হবে। গ্রাহকদের বলবো আপনাদের আমানত এবি ব্যাংকেই সবচেয়ে নিরাপদ।” তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক একীভূতকরণের ঘোষণা এবং ব্যাংক খাতে নজিরবিহীন নৈরাজ্য লুটপাটের চিত্র প্রকাশের পর গ্রাহকের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছিল। তারা জমানো টাকা তুলে নিতে ব্যাংকে আসেন। কয়েকটি ব্যাংক টাকা দিতে ব্যর্থ হয়। ঝামেলায় পড়েন অনেক আমানতকারী। এই জায়গাটায় এবি ব্যাংক অনেক এগিয়ে আছে-এখনো পর্যন্ত চেক জমা দিয়ে টাকা পায়নি এই রেকর্ড ‘এবি’র নেই।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৫:৪২ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫

bankbimarkhobor.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

[abm_bangladesh_map]
advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক
মোঃ ইসলাম শেখ
কার্যালয়

৭৯, সিদ্ধেশ্বরী সার্কুলার রোড, (৩য় তলা, বাম দিক), সিদ্ধেশ্বরী, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭

01760742336

[email protected]