বুধবার ১৩ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

ফারইস্টের সাবেক সিইও আপেল মাহমুদের বিরুদ্ধে মামলা

  |   শনিবার, ০৯ আগস্ট ২০২৫   |   প্রিন্ট   |   34 বার পঠিত

ফারইস্টের সাবেক সিইও আপেল মাহমুদের বিরুদ্ধে মামলা

ফারইস্টের সাবেক সিইও আপেল মাহমুদের বিরুদ্ধে মামলা

ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ৫৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর গোপনীয় ব্যক্তিগত তথ্য পাচারের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির সাবেক মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ও বর্তমানে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সদস্য আপেল মাহমুদসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

গত ৪ আগস্ট কোম্পানিটির আইন কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন বাদি হয়ে রাজধানীর শাহবাগ থানায় এই মামলা দায়ের করেন।

সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫-এর ১৯, ২১, ২২ ও ২৭ ধারায় দায়ের করা এই মামলায় আপেল মাহমুদের বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলার অপর আসামিরা হলেন, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও আইটি বিভাগের ইনচার্জ লোকমান ফারুক ও অ্যাসিসট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ওসমান গণি।

আসামিদের বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজসে অবৈধভাবে লাভবান হওয়ার অসৎ উদ্দেশ্যে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ের ডিজিটাল ডিভাইসে প্রবেশ করে প্রতারণার মাধ্যমে তথ্য ভান্ডার থেকে ৫৫ হাজার ৮৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর জাতীয় পরিচয়পত্র, শিক্ষাগত যোগ্যতা, ব্যাংক হিসাব, মোবাইল নাম্বার, বেতন-ভাতা, পরিচিতি নাম্বারসহ গোপনীয় তথ্য সাবলাইন নামক একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে সরবরাহ করার অভিযোগ আনা হয়েছে মামলার এজাহারে।

এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজসে অবৈধভাবে লাভবান হওয়ার অসৎ উদ্দেশ্যে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সে কর্মরত সকল কর্মকর্তা কর্মচারীর সংরক্ষিত তথ্যভান্ডার থেকে তাদের ব্যক্তিগত গোপনীয় তথ্যসমূহ তথা- জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, ব্যাংক হিসাবের তথ্য, মোবাইল নম্বর, কর্মচারী পরিচিতি তথ্য, বেতন সংক্রান্ত তথ্য ইত্যাদি দেশি ও বিদেশি কোম্পানীর নিকট সরবরাহ করার পরিকল্পনা করে। যার ধারাবাহিকতায় ২ ও ৩ নং আসামীদ্বয় গত ২৭ মে ২০২৪ তারিখে সূত্র নং-৩৫,১০,০০০০,০০০, ১৩,০০৮, ২৪ মূলে আইটি বিভাগ হইতে একটি অফিস নোট ১নং আসামি বরাবর উপস্থাপন করিলে ১নং আসামি উক্ত অফিস নোটটি অনুমোদন করে। অর্থাৎ আসামিরা পরস্পর যোগসাজসে উক্ত অফিস নোট তৈরি করিয়া সাবলাইন লিমিটেড নামক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বরাবর কর্মকর্তা কর্মচারীগণের ব্যক্তিগত গোপনীয় তথাসমূহ সরবরাহ করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাপ্তরিক রূপ দেয়। বর্ণিত আসামীরা তাহাদের সহযোগী অজ্ঞাতনামা আসামীদের নিয়ে পরস্পর যোগসাজসে গত ২৭মে ২০২৪ তারিখ অফিস চলাকালীন সময় আনুমানিক সকাল ১০:০০ ঘটিকা হইতে বিকাল ০৬:০০ ঘটিকার মধ্যে ফারইস্ট টাওয়ারে অবস্থিত অফিস কক্ষে বসে অফিসের ডিজিটাল ডিভাইস কম্পিউটারে বেআইনিভাবে প্রবেশ করিয়া উক্ত কোম্পানির ৫৫,০৮৬ জন কর্মকর্তা কর্মচারীর ব্যক্তিগত গোপনীয় তথ্যসমূহ তথা- জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, ব্যাংক হিসাবের তথ্য, মোবাইল নম্বর, কর্মচারী পরিচিতি তথ্য, বেতন সংক্রান্ত তথ্যাদি সাবলাইন লিমিটেড নামীয় প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য দেশি বিদেশি প্রতিষ্ঠানে জালিয়াতির মাধ্যমে সরবরাহ করিয়া আমাদের কোম্পানির সাথে প্রতারণা করিয়াছে। যাহার ফলে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্সের এবং ইহার ৫৫,০৮৬ জন
কর্মকর্তা কর্মচারীর জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা চরম হুমকির সম্মুখিন হইয়াছে।’

এজাহারে আরো উল্লেখ করা হয়, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের অভ্যন্তরীণ অনুসন্ধানে এই অপরাধ সংঘটনের বিষয়টি উঠে আসে এবং বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়ে মামলা দায়েরের অনুমোদন দেয়।
মামলার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ফারইস্টের সাবেক মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ও বর্তমানে আইডিআরএ’র সদস্য আপেল মাহমুদ বলেন, “যা করেছি জনস্বার্থে। ব্যক্তিগত কোনো স্বার্থ এখানে থাকার সুযোগ নেই।”

মামলায় আপেল মাহমুদের বিরুদ্ধে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫ এর ১৯, ২১, ২২ ও ২৭ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
অধ্যাদেশের ১৯। (১) ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি-

(ক) অননুমোদিতভাবে, ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে কোনো কম্পিউটার, কম্পিউটার সিস্টেম, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বা সাইবার স্পেস হইতে কোনো উপাত্ত, উপাত্ত-ভান্ডার, তথ্য বা উহার উদ্ধৃতাংশ সংগ্রহ করেন, বা স্থানান্তরযোগ্য জমাকৃত তথ্য-উপাত্তসহ উক্ত কম্পিউটার, কম্পিউটার সিস্টেম বা কম্পিউটার নেটওয়ার্কের তথ্য সংগ্রহ করেন বা কোনো উপাত্তের অনুলিপি বা অংশবিশেষ সংগ্রহ করেন, বা

(খ) কোনো কম্পিউটার, কম্পিউটার সিস্টেম বা কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বা সাইবার স্পেসে উদ্দেশ্যমূলকভাবে কোনো ধরনের সংক্রামক, ম্যালওয়্যার বা ক্ষতিকর সফটওয়্যার প্রবেশ করান বা করানোর চেষ্টা করেন, বা

(গ) ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো কম্পিউটার, কম্পিউটার সিস্টেম, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, উপাত্ত বা কম্পিউটারের উপাত্ত-ভান্ডার, সাইবার স্পেস সংক্রান্ত ভৌত অবকাঠামোর ক্ষতিসাধন করেন, বা ক্ষতিসাধনের চেষ্টা করেন বা উক্ত কম্পিউটার, কম্পিউটার সিস্টেম, কম্পিউটার নেটওয়ার্কে বা সাইবার স্পেসে রক্ষিত অন্য কোনো প্রোগ্রামের ক্ষতি সাধন করেন বা করিবার চেষ্টা করেন, বা

(ঘ) কোনো কম্পিউটার, কম্পিউটার সিস্টেম, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বা সাইবার স্পেসে কোনো বৈধ বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে প্রবেশ করিতে কোনো উপায়ে বাধা সৃষ্টি করেন বা বাধা সৃষ্টির চেষ্টা করেন, বা

(ঙ) ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে প্রাপক বা গ্রাহকের অনুমতি ব্যতীত অযাচিত ইলেক্ট্রনিক ফিশিং (Phishing) মেইল বা র‍্যানসমওয়‍্যার মেইল (সাইবার মুক্তিপণ) প্রেরণ করেন, বা

(চ) কোনো কম্পিউটার, কম্পিউটার সিস্টেম, কম্পিউটার নেটওয়ার্কে বা সাইবার স্পেসে অন্যায়ভাবে হস্তক্ষেপ বা কারসাজি করিয়া কোনো ব্যক্তির সেবা গ্রহণ বা ধার্যকৃত চার্জ অন্যের হিসাবে জমা করেন বা করিবার চেষ্টা করেন,

তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।

(২) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ৫০ (পঞ্চাশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

২১ ধারায় বলা হয়েছে, (১) যদি কোনো ব্যক্তি সাইবার স্পেস ব্যবহার করিয়া জালিয়াতি করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।

(২) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ২ (দুই) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ২০ (বিশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

ব্যাখ্যা।- এই ধারার উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, ‘সাইবার স্পেসে জালিয়াতি’ অর্থ কোনো ব্যক্তি বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এজেন্ট কর্তৃক বিনা অধিকারে বা প্রদত্ত অধিকারের অতিরিক্ত হিসাবে বা অনধিকার চর্চার মাধ্যমে সাইবার স্পেস ব্যবহার করিয়া কোনো কম্পিউটার বা ডিজিটাল ডিভাইসের ইনপুট বা আউটপুট প্রস্তুত, পরিবর্তন, মুছিয়া ফেলা ও লুকাইবার মাধ্যমে অশুদ্ধ ডাটা বা প্রোগ্রাম, তথ্য বা ভ্রান্ত কার্য, তথ্য সিস্টেম, কম্পিউটার বা ডিজিটাল নেটওয়ার্ক পরিচালনা বা ডিজিটাল স্বাক্ষর সংযুক্ত বা স্বাক্ষরবিহীন ডিজিটাল ডকুমেন্টস উৎপাদন বা ইলেক্ট্রনিক ফাইল উৎপাদন বা বিদ্যমান ফাইল পরিবর্তন বা ডিজিটাল মানি বা ইলেক্ট্রনিক মুদ্রা বা ক্রিপ্টোকারেন্সি উৎপাদন বা অন্যের জাতীয় পরিচয়পত্রে নিবন্ধিত সিম ব্যবহার করিয়া মোবাইল ব্যাংকিং পরিচালনা, হুন্ডি কার্যে নিযুক্তি কিংবা জুয়ার পোর্টাল পরিচালনা করা।

সাইবার স্পেসে প্রতারণার অপরাধ ও দণ্ড সম্পর্কিত ২২ ধারায় বলা হয়ছে, (১) যদি কোনো ব্যক্তি সাইবার স্পেস ব্যবহার করিয়া প্রতারণা করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।

(২) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ৫০ (পঞ্চাশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

ব্যাখ্যা।- এই ধারার উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, ‘সাইবার স্পেসে প্রতারণা’ অর্থ কোনো ব্যক্তি কর্তৃক ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে অথবা অনুমতি ব্যতিরেকে কোনো কম্পিউটার প্রোগ্রাম, কম্পিউটার সিস্টেম, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, ডিজিটাল ডিভাইস, ডিজিটাল সিস্টেম, ডিজিটাল নেটওয়ার্কে, ই-কমার্সে বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কোনো তথ্য পরিবর্তন করা, মুছিয়া ফেলা, নূতন কোনো তথ্যের সংযুক্তি বা বিকৃতি ঘটাইবার মাধ্যমে উহার মূল্য বা উপযোগিতা হ্রাস করা, তাহার নিজের বা অন্য কোনো ব্যক্তির আর্থিক বা অন্য কোন সুবিধা প্রাপ্তির চেষ্টা বা ক্ষতি করিবার চেষ্টা করা বা ছলনার আশ্রয় গ্রহণ করা।

অপরাধ সংঘটনে সহায়তা ও উহার দণ্ড সম্পর্কে অধ্যাদেশের ২৭ ধারায় বলা হয়েছে, (১) যদি কোনো ব্যক্তি এই অধ্যাদেশের অধীন কোনো অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।

(২) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি মূল অপরাধটির জন্য যে দণ্ড নির্ধারিত রহিয়াছে, সেই দণ্ডেই দণ্ডিত হইবেন।

 

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৬:২৮ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ০৯ আগস্ট ২০২৫

bankbimarkhobor.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

[abm_bangladesh_map]
advertisement
advertisement
advertisement
সম্পাদক
মোঃ ইসলাম শেখ
কার্যালয়

৭৯, সিদ্ধেশ্বরী সার্কুলার রোড, (৩য় তলা, বাম দিক), সিদ্ধেশ্বরী, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭

01760742336

[email protected]