বৃহস্পতিবার ১৪ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

চালু হলো মোটর লায়াবিলিটি ইন্স্যুরেন্স

  |   রবিবার, ১০ আগস্ট ২০২৫   |   প্রিন্ট   |   36 বার পঠিত

চালু হলো মোটর লায়াবিলিটি ইন্স্যুরেন্স

চালু হলো মোটর লায়াবিলিটি ইন্স্যুরেন্স

অবশেষে ‘মোটর লায়াবিলিটি ইন্স্যুরেন্স’ নামে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণকারী বা আহত যাত্রীদের জন্য ফের মোটর বীমা পলিসি চালুর অনুমোদন দিয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।

নতুন এই পলিসির আওতায় দুর্ঘটনায় মৃত্যু বা স্থায়ী অক্ষমতার ক্ষেত্রে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত এককালীন ক্ষতিপূরণের বিধান রাখা হয়েছে। গত ৭ আগস্ট জারি করা এক সার্কুলারে (নং- নন-লাইফ ১০৫/২০২৫) মোটর লায়াবিলিটি ইন্স্যুরেন্স নামে এই বীমা পলিসি চালুর ঘোষণা দেয় আইডিআরএ। এর আগে গত ১৩ জুলাই অনুষ্ঠিত সেন্ট্রাল রেটিং কমিটির ১৮৫ তম সভার সুপারিশের আলোকে ৩ আগস্ট কর্তৃপক্ষের ১৮৮ তম সভায় এটি অনুমোদন করা হয়। তবে পলিসিটি অপশনাল বা ঐচ্ছিক হিসেবে চালু করা হয়েছে, অর্থাৎ এটি গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক নয়। আইডিআরএ জানিয়েছে, জনগণ তাদের ইচ্ছামতো এই বীমা পলিসি গ্রহণ করতে পারবেন, তবে যদি কেউ তা গ্রহণ না করেন, তাতেও কোনো সমস্যা হবে না।

মোটর লায়াবিলিটি ইন্স্যুরেন্স পলিসির প্রিমিয়াম হার, পলিসি ওয়াডিং, সার্টিফিকেটের নমুনা এবং ক্ষতিপূরণের হার আগামী এক বছরের জন্য পাইলটভিত্তিতে অনুমোদন করা হয়েছে। বছর শেষে পলিসিটির পরিসংখ্যান আইডিআরএকে পাঠাতে হবে।

নতুন এই বীমা পলিসিতে যানবাহনের ধরন এবং সিসি (কিউবিক সেন্টিমিটার) অনুযায়ী প্রিমিয়াম নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে ১৫০ সিসির মোটর সাইকেলের জন্য সর্বমোট প্রিমিয়াম দিতে হবে এক হাজার ছয় টাকা। এক্ষেত্রে সিট সংখ্যা ধরা হয়েছে দু’টি। আর ৩৫০ সিসির চার সিটের ত্রিচক্রযানের জন্য সর্বমোট প্রিমিয়াম দিতে হবে এক হাজার ৬৯৬ টাকা।

অপরদিকে ড্রাইভারসহ ৫ সিটের (১৩শ’ সিসির) একটি প্রাইভেট কারের জন্য সর্বমোট প্রিমিয়াম গুণতে হবে দুই হাজার ৭০ টাকা। এ ছাড়াও দুই সিট বিশিষ্ট তিন টনের একটি ট্রাকের জন্য প্রিমিয়াম নির্ধারণ করা হয়েছে তিন হাজার ৬৫১ টাকা।

আইডিআরএ’র সার্কুলার অনুসারে এই পলিসির আওতায় বীমাকৃত যানবাহন দুর্ঘটনায় পড়লে এবং এ কারণে কোন মৃত্যু হলে এককালীন সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে।

আর দুর্ঘটনায় আঘাতপ্রাপ্ত হলে স্থায়ীভাবে সম্পূর্ণ অক্ষম হলে জনপ্রতি এককালীন সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা বীমা কাভারেজ দেয়া হবে। আর আংশীক স্থায়ী অক্ষমতা তৈরি হলে তফসিলে নির্ধারিত হারে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে।

এ ছাড়াও গুরুতর আহত কিন্তু চিকিৎসার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকলে জনপ্রতি এককালীন সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে।
অপরদিকে দুর্ঘটনায় যানবাহনের ক্ষতি হলে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। এ ছাড়াও আদালতের ফি, সালিশ ফি, আইনী প্রতিনিধিত্ব এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ফি বাবদ সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা প্রদান করা হবে।

বীমা খাতের বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন এই পলিসি চালু হওয়ার মাধ্যমে দেশের নন-লাইফ বীমা খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসার সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে, এটি বীমা পেনিট্রেশন বৃদ্ধি করতে সহায়ক হতে পারে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে বীমার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করবে। এর ফলে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বা আহত ব্যক্তিদের পরিবারের জন্য আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত হবে, যা একটি বড় উপকারিতা। তবে পলিসিটি সরকারিভাবে বাধ্যতামূলক করা না হলে এটি পেনিট্রেশন বৃদ্ধিতে প্রত্যাশিত সুফল বয়ে আনবে না বলে মনে করছেন তারা। যে কারণে বীমা পলিসিটিকে আগের মতো বাধ্যতামূলক করার দাবি জানিয়েছেন অংশীজনরা।

জানতে চাইলে দেশের বীমা কোম্পানিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) সাবেক সভাপতি নাসির উদ্দিন আহমেদ পাভেল বলেন, “আইডিআরএ কর্তৃক মোটর লায়াবিলিটি ইন্স্যুরেন্স পলিসি চালু করাকে আমি স্বাগত জানাই। বিআইএ’র প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন আমি বীমা খাতের কয়েকটি বিষয় নিয়ে আইডিআরএর চেয়ারম্যান মহোদয়ের সাথে সাক্ষাৎ করি। তন্মধ্যে একটি বিষয় ছিল, মোটর লায়াবিলিটি ইন্স্যুরেন্স পলিসি প্রবর্তন করা এবং পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সাথে আলোচনার মাধ্যমে মোটর ইন্স্যুরেন্স আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ নেয়া। কারণ, মোটর বীমা পৃথিবীর সকল দেশে বাধ্যতামূলক। এই বিষয়ে আমি একটি চিঠি আইডিআরএ চেয়ারম্যান বরাবর পাঠাই। এখন সকল নন লাইফ বীমা কোম্পানির কাজ হবে এই নতুন পণ্যটি আন্তরিকতার সাথে বিপণন করা ও এর দাবি নিষ্পত্তি করা। এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে মোটরবীমা বাধ্যতামূলক করা সহজতর হবে। তবে বাধ্যতামূলক করার আগে এই পণ্যে কিছু পরিবর্তন আনা প্রয়োজন হতে পারে বলে আমি মনে করি।”

এর আগে ২০২০ সালের ২০ ডিসেম্বর সার্কুলার নং- নন-লাইফ ৮২/২০২০ জারি করে যানবাহনের ক্ষেত্রে থার্ড পার্টি বীমা পরিকল্প বাতিল করে আইডিআরএ। ওই বছরের অক্টোবরে মোটরযান অধ্যাদেশ, ১৯৮৩ রহিত করে সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ জারির মাধ্যমে সরকার যানবাহনের থার্ড পার্টি বীমা তুলে দিলে এই সিদ্ধান্ত নেয় আইডিআরএ।

১৯৮৩ সালের মোটরযান অধ্যাদেশে বীমা বাধ্যতামূলক ছিল। বীমা ছাড়া গাড়ি সড়কে চালালে জরিমানা দিতে হতো। ফার্স্ট পার্টি বীমা করলে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ির জন্য ক্ষতিপূরণ পেতেন মালিক। বাধ্যতামূলক ছিল থার্ড পার্টি নামে পরিচিত তৃতীয় পক্ষের বীমা। এ বীমার আওতায় দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত যাত্রী, পথচারীর ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কথা ছিল। এই বীমার প্রিমিয়ামও (কিস্তি) ছিল সামান্য। বাসের জন্য বছরে দেড় হাজার টাকা এবং মোটরসাইকেলে ২২০ টাকা দিতে হতো। অন্যান্য যানবাহনে প্রিমিয়ামের পরিমাণ ছিল ৩০০ থেকে দেড় হাজার টাকা।

থার্ড পার্টি বীমা তুলে দিয়ে ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইনের ৫৩ ধারা অনুযায়ী আর্থিক সহায়তা তহবিল গঠন করা হয়। তহবিল পরিচালনায় ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা হয়েছে আইনের ৫৪ ধারা অনুযায়ী।

যদিও আফগানিস্তান, সোমালিয়া ও সাউথ সুদান ব্যতীত পৃথিবীর সকল দেশেই মোটর বীমা বাধ্যতামূলক রয়েছে। যেসব দেশে কম্প্রিহেন্সিভ মোটর বীমা বাধ্যতামূলক নেই, সে সব দেশে ন্যূনতম থার্ড পার্টি মোটর বীমা বাধ্যতামূলক রয়েছে।

 

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৫:২০ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১০ আগস্ট ২০২৫

bankbimarkhobor.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

[abm_bangladesh_map]
advertisement
advertisement
advertisement
সম্পাদক
মোঃ ইসলাম শেখ
কার্যালয়

৭৯, সিদ্ধেশ্বরী সার্কুলার রোড, (৩য় তলা, বাম দিক), সিদ্ধেশ্বরী, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭

01760742336

[email protected]