
ব্যাংক ডেস্ক | সোমবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৩ | প্রিন্ট | 84 বার পঠিত
সংগৃহীত ছবি
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) যাত্রা হয় ১৯৯৯ সালের ২৪ অক্টোবর। ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরুর দুই যুগ পূর্ণ হচ্ছে আগামীকাল। ব্যাংকটির বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এমটিবি ও ব্যাংক খাতের বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ওবায়দুল্লাহ রনি
প্রতিষ্ঠার দুই যুগ পার করছে এমটিবি। ব্যাংকটি বর্তমানে কোন বিষয় অগ্রাধিকার দিচ্ছে?
মাহবুবুর রহমান: গত কয়েক বছরে ঋণ বিকেন্দ্রীকরণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। একটি সময় মোট ঋণের প্রায় ৯০ শতাংশ ছিল ‘হোলসেল’, যা এখন ৮১ শতাংশে নামানো হয়েছে। আগামী ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যে ৫০ শতাংশে নামিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। এসএমইর ওপর বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। শুধু শাখার মাধ্যমে ব্যাংকিং কার্যক্রম সীমাবদ্ধ না রেখে টেলকো ও ফিনটেকের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ঋণ দেওয়া হবে। এমটিবি প্রথমবারের মতো মাইক্রো মার্চেন্টদের অর্থায়ন শুরু করেছে। এটা ডিজিটাল ঋণ। সিআইবিসহ সব প্রক্রিয়া শেষ করার ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে ঋণ অনুমোদন হয়ে যাবে। ডিজিটালকেই আমরা ফোকাস করতে চাই। এ ছাড়া এক সময় নারী উদ্যোক্তা ঋণ ছিল মাত্র ৩ শতাংশ। এখন তা ১৬ দশমিক ৭২ শতাংশে চলে গেছে। ২৪ বছরপূর্তি উপলক্ষে আজ ২৪ জন নারী উদ্যোক্তাকে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকার এসএমই ঋণ দেওয়া হবে। প্রথমবারের মতো তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিরা ঋণ পেতে যাচ্ছে।
ব্যাংকের বিভিন্ন সূচকের অগ্রগতি জানতে চাই
মাহবুবুর রহমান: গত জুন পর্যন্ত এমটিবির ২৫ হাজার কোটি টাকার আমানত এবং ২৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকার ঋণ রয়েছে। মূলধন ভিত্তি রয়েছে ১৪ শতাংশের ওপরের। সারাদেশে ১২০টি শাখা, ৩৭টি উপশাখা, ৩০৫টি এটিএম, ১৪টি সিডিএম, ২ হাজার ৮৩০টি পস এবং ১৯৫টি এজেন্ট পয়েন্টের মাধ্যমে সেবা দেওয়া হচ্ছে। ২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল সময়ে বিতরণ করা কিছু ঋণ খারাপ হয়েছে। এসব ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি রেখে ক্লিন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ২০২১ সালে ২০০ কোটি এবং ২০২২ সালে ৪১১ কোটি টাকা প্রভিশন রাখা হয়েছে। ব্যাংকের সুশাসন প্রতিষ্ঠায় পরিচালনা পর্ষদ ভূমিকা রাখছে। সব মিলিয়ে ব্যাংকের মধ্যে একটি ভালো করপোরেট সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়েছে।
তারল্য সংকটে রয়েছে অনেক ব্যাংক। আপনাদের তারল্য পরিস্থিতি জানতে চাই।
মাহবুবুর রহমান: যে কোনো ব্যাংকের জন্য তারল্য বড় বিষয়। যার যত তারল্য থাকবে, সে তত ভালো করবে। বর্তমানে ব্যাংকের ঋণ-আমানত অনুপাত ৮৩ শতাংশের মতো। এ বছর আমরা ঋণ খুব বেশি না বাড়িয়ে তারল্য বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছি। আমানত মিশ্রণ বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এতে করে গত বছরের ডিসেম্বরের তুলনায় আমানত সংগ্রহে খরচ বেড়েছে ৮ থেকে ১০ বেসিস পয়েন্ট। তবে সামনে অনেক কঠিন সময়। কেননা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক রেপো রেট বাড়িয়ে দিয়েছে। আবার রেপো সহায়তা কমিয়েছে। ট্রেজারি বিল, বন্ডের সুদহার এখন ব্যাংকের আমানতের ওপরে উঠে গেছে। ফলে ব্যাংকের ওপর সুদহার বাড়ানোর চাপ তৈরি হচ্ছে।
গ্রাহক পর্যায়েও তো সুদহার বাড়বে?
মাহবুবুর রহমান: ঋণের এক ধরনের সীমা দেওয়া আছে। ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের গড় সুদের সঙ্গে সাড়ে ৩ শতাংশ মার্জিন দেওয়া আছে। তবে সাড়ে ৩ শতাংশ কতদিন চলবে জানি না। আগামী মাসে হয়তো ট্রেজারি বিলের গড় সুদ ৭ দশমিক ৯০ শতাংশের মতো হবে। এর সঙ্গে সাড়ে ৩ শতাংশ যোগ করলে গ্রাহক পর্যায়ে সুদহার হবে সাড়ে ১১ শতাংশের মতো। একটি ভালো ব্যাংকেরও পরিচালন ব্যয় দুই থেকে আড়াই শতাংশ। এখন ৯ থেকে সাড়ে ৯ শতাংশ সুদে আমানত নিয়ে কীভাবে এমন সুদে ঋণ দেওয়া যাবে। অবশ্য এখন ঋণ চাহিদা কম রয়েছে।
ডলার সংকট ব্যাংক খাতের ওপর কোন ধরনের প্রভাব ফেলছে?
মাহবুবুর রহমান: গত বছরের জুলাই থেকে ডলার বাজার খুব টাইট হয়েছে। সামনে নির্বাচন। ফলে খুব শিগগির বড় কোনো পরিবর্তন আশা করা যায় না। আবার রপ্তানি আয় নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ইপিবির তথ্যে বড় ধরনের অমিল দেখা যাচ্ছে। আবার রেমিট্যান্সে অস্থিতিশীলতা দেখা যাচ্ছে। তার মানে হুন্ডি অনেক বেড়েছে। হুন্ডি আগেও ছিল। তবে তা একটা পর্যায়ে ছিল। এখন অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। সরকারি পর্যায় থেকে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা না নিলে হবে না। কারা হুন্ডি করে সবার জানা। আমরা পত্রিকায় দেখি, কোন ব্যবসায়ী, আমলা, ব্যাংকার বিদেশে বাড়ি করছেন। সুতরাং, এদের ধরতে হবে। না ধরলে সমস্যার সমাধান হবে না।
আইএমএফের ঋণ কি অর্থনীতিতে সংস্কার জোরদার করবে?
মাহবুবুর রহমান: আইএমএফ যেসব সংস্কারের কথা বলেছে, করতে পারলে নিঃসন্দেহে ভালো হবে। যেমন– কর সংস্কারের কথা বলছে। এটি না করে কতক্ষণ আমরা ঋণ নিয়ে চলব। দেশে এত কোটিপতি হচ্ছে। অথচ কর সংস্কার তেমন হচ্ছে না। আমাদের কর কর্মকর্তারা শুধু যারা কর দেন, তাদের ওপরই চাপাতে থাকেন।
বিভিন্ন ছাড়ের পরও খেলাপি ঋণ বাড়ছে। এটা কমাতে কি উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে?
মাহবুবুর রহমান: খেলাপি ঋণ কমানোর জন্য আইনি কাঠামোতে পরিবর্তন দরকার। দেশের বড় বড় ঋণখেলাপিদের বেশির ভাগই ইচ্ছাকৃত। এদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলত শাস্তি দিতে হবে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ছাড়া কোনো কাজ হবে না। আবার ঋণ দেওয়ার সময় ব্যাংকারদেরও দায়িত্ব আছে।
Posted ২:০৯ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৩
bankbimarkhobor.com | Mr. Islam