
আন্তর্জাতিক ডেস্ক | মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৩ | প্রিন্ট | 35 বার পঠিত
সংগৃহীত ছবি
ট্যাঙ্ক ও বুলডোজার নিয়ে গাজা শহরে ঢুকে আগ্রাসন চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। তবে তাদের পড়তে হচ্ছে হামাসের বড় প্রতিরোধের মুখে। গতকাল ইসরায়েলি সেনাদের একটি দলকে হত্যার দাবি করেছে হামাস। একই সঙ্গে দুটি সামরিক যান ও একটি ট্যাঙ্ক ধ্বংসের দাবিও তাদের। অন্যদিকে, ইসরায়েলি বাহিনীও ‘ডজন’খানেক হামাস যোদ্ধা হত্যা ও বিপুল পরিমাণ অস্ত্র জব্দ এবং হামাসকে ধাপে ধাপে ধ্বংস করা হচ্ছে বলে দাবি করেছে। এদিকে, যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাক্ষাৎ করেছেন কাতারের আমিরের সঙ্গে। খবর বিবিসি ও আলজাজিরার।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) গতকাল গাজার মাটিতে তাদের অভিযানের একটি ছোট ভিডিও প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, বিমান হামলায় ধ্বংস হওয়া গাজার একটি এলাকায় ট্যাঙ্ক নিয়ে প্রবেশ করছে সেনারা। প্রবেশের সময় সেনা দলটি গুলিও চালাচ্ছে। বেশ কয়েকটি এলাকার প্রবেশের অংশ ওই ভিডিওতে রয়েছে। ক্লিপটির কিছু অংশ সিল-বন্ধ অঞ্চলের উত্তরে বেইট হ্যানউনে সৈন্যদের দেখা যায়। তবে এই ভিডিও কবে বা কখন ধারণ করা হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়।
আইডিএফ হামলার আপডেটে বলেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ৩০০টি লক্ষ্যবস্তুতে বিমান এবং স্থল উভয় আক্রমণ চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এ সময় হামাস তাদের বাহিনীকে ট্যাঙ্কবিরোধী ক্ষেপণাস্ত্র এবং মেশিনগানের গুলি দিয়ে হামলা করেছে বলেও জানানো হয়।
গতকাল বিকেল নাগাদ ইসরায়েলি সেনা ও ট্যাঙ্ক উত্তর গাজা উপত্যকার বেইট লাহিয়া গ্রাম অতিক্রম করে গাজা শহরের একটি প্রধান সড়ক আল-নাসরে অবস্থান করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সেখানে হামাস যোদ্ধা ও ইসরায়েলি সেনাদের মধ্যে ব্যাপক গুলিবিনিময় হয়।
হামাসের সশস্ত্র শাখা আল কাসাম ব্রিগেড জানিয়েছে, এক ইসরায়েলি সেনাকে হত্যা করেছে তারা। এ ছাড়া উত্তর-পশ্চিম গাজায় এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকারী দুটি গাড়ি ধ্বংস এবং একটি অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক শেল দিয়ে আঘাত করে জেইতুনের পাশে একটি ইসরায়েলি ট্যাঙ্কে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আল কাসাম ব্রিগেড আরও জানায়, আগ্রাসনকারীরা বেইট হানুনের একটি ভবনে ঢোকার পর সেখানে আগে থেকেই লুকিয়ে থাকা হামাস বন্দুকধারীরা একটি বুলডোজার এবং একটি অনির্দিষ্ট আইডিএফ গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালায়। ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদের সশস্ত্র শাখা আল কুদস ব্রিগেডও বলেছে, তারা উত্তর-পশ্চিম গাজার ইরেজ এবং আল-আতাত্রার কাছে মর্টার শেল দিয়ে ইসরায়েলি সেনাদের দুটি দল এবং যানবাহন আক্রমণ করেছে।
এদিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলছে, তারা গাজা উপত্যকায় ‘গভীর যুদ্ধ’ চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি বাহিনী উত্তরে হামাসের একটি চৌকিতে আক্রমণ করেছে। এতে ডজনখানেক যোদ্ধাকে হত্যা এবং বড় পরিমাণ অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে।
উত্তর থেকে দক্ষিণকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা
গাজার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইয়াদ আল-বাজুম বলেছেন, ইসরায়েলি বাহিনী বর্তমানে সালাহ আল-দিন স্ট্রিটের প্রধান রাস্তায় রয়েছে। গাজার উপকূল বরাবর প্রসারিত আল-রাশিদ স্ট্রিটে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে তারা। দখলদার বাহিনী উত্তর গাজা স্ট্রিপকে দক্ষিণ থেকে আলাদা করতে চাইছে।
এদিকে ব্যাপক বিমান হামলা ও বোমাবর্ষণের ফলে গাজা উপত্যকার উত্তর থেকে দক্ষিণে সংযোগকারী অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে গাজায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া মানবিক সহায়তার ট্রাক থেকে মানুষকে ত্রাণ সরবরাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
হিজবুল্লাহর মাধ্যমে গাজায় ইরানের হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা
বিশ্লেষকরা বলছেন, লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর মাধ্যমে গাজায় হস্তক্ষেপ করতে পারে ইরান। দেশটির কর্মকর্তারা গাজায় ইসরায়েলি হামলার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। তবে ইরান সরাসরি যুদ্ধে জড়াতে চায় না বলে মনে করেন কুইন্সি ইনস্টিটিউট ফর রেসপন্সিবল স্টেট ক্রাফটের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট ত্রিতা পারসি বিশ্বাস।
‘গাজা শিশুদের কবরস্থান’
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় গতকাল পর্যন্ত ৩ হাজার ৫০০ শিশুসহ মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৩০৬ জনে। এদিকে ইউনিসেফ বলছে, গাজায় অন্তত ৯৪০ শিশু নিখোঁজ রয়েছে। গোটা গাজাকে শিশুদের কবরস্থান বলে অভিহিত করেছে সংস্থাটি।
গাজা শহর বিমান হামলার কেন্দ্রবিন্দু
সোমবার রাতে খান ইউনিসে বিমান হামলায় কিছুটা বিরতি ছিল। কিন্তু গতকাল সকালে কিছু এলাকায় আবারও বিমান হামলা করে ইসরায়েল। দক্ষিণকে নিরাপদ বলে মনে করা হলেও সেখানে হামলা করা হচ্ছে। উত্তর থেকে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ জনসংখ্যা অঞ্চলটিতে আশ্রয় নিয়েছে। তবে ইসরায়েলি বিমান হামলার মূল কেন্দ্র এখন গাজা শহর।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কাতারের আমিরের সাক্ষাৎ
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আবদুল্লাহিয়ান দোহায় কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গে দেখা করেছেন। এ সময় তিনি ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির ফিলিস্তিন ইস্যুতে মৌখিক বার্তা পৌঁছে দেন। এদিকে কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আব্দুলরহমান বিন জসিম আল থানি জানান, তিনি আমির-আবদুল্লাহিয়ানের সঙ্গে সাক্ষাতে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নেওয়ার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেছেন। এদিকে জর্ডানও অবিলম্বে মানবিক বিপর্যয় বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।
Posted ৫:২৮ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৩
bankbimarkhobor.com | Mr. Islam