বৃহস্পতিবার ১৪ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

অশ্বগতিতে উঠে নামছে শামুকগতিতে

অর্থনীতি ডেস্ক   |   সোমবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৩   |   প্রিন্ট   |   72 বার পঠিত

অশ্বগতিতে উঠে নামছে শামুকগতিতে

সংগৃহীত ছবি

পেঁয়াজের বাজার এখনও বেশ চড়া। যদিও সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর নজরদারি জোরদার করাতে কিছু এলাকায় কেজিতে ১০ থেকে ৩০ টাকা দর কমেছে। তবে ফের বাড়তে শুরু করেছে আলুর দাম। আর দাম দ্বিগুণ হওয়ার এক দিনের মাথায় বড় দরপতন হয়েছে কাঁচামরিচের। এদিকে সয়াবিন তেলের মতো ঘোষণা ছাড়াই বেড়েছে প্যাকেটজাত চিনির দাম। গতকাল রোববার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মালিবাগ, হাতিরপুল, মোহাম্মদপুরসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে এসব তথ্য মিলেছে।

বড় বড় বাজারে কেজিতে ১০ টাকা কমে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়। আর দেশি পেঁয়াজ ২০ থেকে ৩০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়। এ ছাড়া বাজারে নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা দরে। তবে গত দুই দিনের চেয়ে বাজারে গতকাল পেঁয়াজের সরবরাহ ও ক্রেতা দুটিই কম দেখা গেছে।

অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে গত বৃহস্পতিবার পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় ভারত, যা আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। পাশের দেশের এমন নিষেধাজ্ঞার খবরে বাজারে হু হু করে বেড়েছে পেঁয়াজের দর। এক পর্যায়ে গত শনিবার খুচরা পর্যায়ে দেশি পেঁয়াজ সর্বোচ্চ ২৫০ এবং ভারতীয় পেঁয়াজের দর ২০০ টাকা ছুঁয়েছিল।

রাতারাতি অস্বাভাবিক দর বাড়ার কারণে গতকালও ঢাকাসহ সারাদেশের বাজারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে ৮০ প্রতিষ্ঠানকে ৩ লাখ ৭০ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করেছে। বাজার তদারকিতে নেমেছে সরকারের অন্য সংস্থাও।

গতকাল রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মলেনে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) হারুন অর রশীদ বলেছেন, কেউ যদি কালোবাজারি করে, পেঁয়াজ মজুদ করে এবং বেশি দামে বিক্রির পাঁয়তারা করে, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। ডিবির লালবাগ বিভাগের একাধিক দল চকবাজার ও শ্যামবাজার এলাকায় কাজ করেছে। গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

সরকারের বিভিন্ন সংস্থার তৎপরতায় দর কিছুটা কমলেও পেঁয়াজের সরবরাহ নিয়ে নানা আলোচনা রয়েছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে। কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিকল্প কোনো দেশ থেকে পেঁয়াজ আসবে, ডলার সংকটে ব্যাংক এলসি দেবে কিনা, এলসি খোলার পর জাহাজে আসতে কতদিন লাগবে, নতুন পেঁয়াজের ফলন কেমন হয়েছে– এসব নিয়ে আলোচনা চলছে তাদের মধ্যে। তাতে বাজারের পরিস্থিতি কেমন হতে পারে তা বোঝার চেষ্টা করছেন তারা।

এদিকে কৃষি মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, দ্রুত মুড়িকাটা পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়বে বাজারে। তাছাড়া জুলাই থেকে গত শনিবার পর্যন্ত পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ৫ লাখ ৭১ হাজার ৫৩৪ টন, যা গত বছরের এই সময়ের চেয়ে ১ লাখ ৫৫ হাজার ২২৪ টন বেশি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভারত থেকে বেসরকারি খাতের আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খোলা ৫২ হাজার টন ও টিসিবির এলসি খোলা ৩ হাজার ৪০০ টন পেঁয়াজ দ্রুত দেশে আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সেজন্য ভারতে বাংলাদেশ দূতাবাসকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

এদিকে পেঁয়াজের অস্থির বাজারের মধ্যেই ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে আলু। বাজারে নতুন আলুর পর্যাপ্ত সরবরাহ দেখা গেছে। তবু দর বাড়ছে পুরোনো আলুর। গত তিন দিনে সর্বোচ্চ ১০ টাকা বেড়েছে আলুর দর। পাইকারি পর্যায়ে কেজি ৫৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে; যা খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। কোথাও এর চেয়ে বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। নতুন আলুও বিক্রি হচ্ছে প্রায় একই দরে। দুই-তিন মাস আগে আলুর দর সর্বোচ্চ ৭০ টাকায় উঠেছিল। এরপর আমদানি শুরু হলে ধীরে ধীরে কমে এক পর্যায়ে ৪৪ থেকে ৪৫ টাকায় নেমেছিল।

হাতিরপুলের মুদি দোকানি ইসরাফিল বলেন, পাইকাররা জানিয়েছেন বৃষ্টির কারণে দুই দিন আলু তুলতে পারেনি কৃষক। ভারত থেকেও আমদানি কমেছে। সেজন্য হয়তো দাম বাড়ছে।

এদিকে চড়ে যাওয়া কাঁচামরিচের ‘দামের ঝাল’ কমে গেছে। গত শনিবার প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে সর্বোচ্চ ২০০ টাকা বিক্রি হয়েছে কাঁচামরিচ। তবে এক দিন পরই বড় দরপতন ঘটেছে। গতকাল মরিচের কেজি নেমে এসেছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়।

মরিচের দাম এমন অস্বাভাবিক হচ্ছে কেন, জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের বিক্রেতা নুরে আলম বলেন, ‘শুক্রবার রাতে মরিচের ট্রাক এসেছিল মাত্র দুই-তিনটি। তাই পরের দিন শনিবার দাম দ্বিগুণ হয়েছে। তবে শনিবার রাতে ১০ থেকে ১২টি ট্রাকে মরিচ আসায় আজ (গতকাল) দাম তিন ভাগের এক ভাগে নেমে গেছে।’

ডিসেম্বরের শুরুর দিকে কোনো ঘোষণা ছাড়াই সয়াবিন তেল লিটারে ৪ টাকা বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এবার ঘোষণা না দিয়ে প্যাকেট চিনির দর বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এতদিন সরকার নির্ধারিত প্যাকেট চিনির কেজি ছিল ১৩৫ টাকা। নতুন করে ১৪৮ টাকা দরের প্যাকেট এসেছে বাজারে। গত দুই-তিন সপ্তাহ বাজারে প্যাকেটজাত চিনির আকাল ছিল। ১০ দোকান খুঁজলে এক দোকানে মিলত। দাম বাড়ানোর পর এখন প্রায় সব কোম্পানির প্যাকেট চিনি পাওয়া যাচ্ছে।

টিসিবির ৯০ টন পেঁয়াজ বেনাপোলে আটকা
বেনাপোল প্রতিনিধি জানান, ভারত থেকে টিসিবির আমদানি করা ৯০ টন পেঁয়াজ ৪ দিনেও বেনাপোল বন্দর থেকে খালাস হয়নি। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) কর্তৃপক্ষ পণ্য ছাড়করণের জন্য ব্যাংক থেকে কাগজপত্র না নেওয়ায় পেঁয়াজগুলো বন্দরে আটকে রয়েছে। ফলে সেগুলো পচতে শুরু করেছে।

মেসার্স কনফিডেন্স ফ্রেড অ্যাসোসিয়েট সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের প্রতিনিধি হালান শরীফ বলেন, টিসিবির আমদানি করা ৯০ টন পেঁয়াজ গত বৃহস্পতিবার বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করে। টিসিবি কর্তৃপক্ষ পণ্য আমদানির কাগজপত্র ব্যাংক থেকে ছাড় করায়নি। তাই পেঁয়াজ বন্দর থেকে খালাস করা সম্ভব হয়নি। রোববার কাগজপত্র ব্যাংক থেকে তুলে কুরিয়ারে বেনাপোলে পাঠিয়েছে। সোমবার সেগুলো বন্দরে দাখিল করা হবে। সোমবারই পেঁয়াজগুলো বন্দর থেকে ছাড় করানোর চেষ্টা করব।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ২:০৮ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৩

bankbimarkhobor.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

[abm_bangladesh_map]
advertisement
advertisement
advertisement
সম্পাদক
মোঃ ইসলাম শেখ
কার্যালয়

৭৯, সিদ্ধেশ্বরী সার্কুলার রোড, (৩য় তলা, বাম দিক), সিদ্ধেশ্বরী, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭

01760742336

[email protected]