শুক্রবার ১৫ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩১শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

চলতি হিসাবে টাকা নেই পাঁচ ইসলামী ব্যাংকের

ব্যাংকের খবর ডেস্ক   |   শুক্রবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩   |   প্রিন্ট   |   98 বার পঠিত

চলতি হিসাবে টাকা নেই পাঁচ ইসলামী ব্যাংকের

ফাইল ছবি

শরিয়াহভিত্তিক পাঁচ ইসলামী ব্যাংক বছরখানেক ধরে বিধিবদ্ধ তারল্য রাখতে পারছে না। ব্যাংকগুলো হলো ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, সোশ্যাল ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী ও ইউনিয়ন ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে এসব ব্যাংকের চলতি হিসাব ঋণাত্মক হলেও লেনদেন হচ্ছে। আগামী ২০ দিনের মধ্যে ব্যাংকগুলোর হিসাবে পর্যাপ্ত অর্থ রাখতে না পারলে লেনদেন বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিস থেকে সম্প্রতি ‘বিএসিএইচ সেটেলমেন্ট জটিলতা প্রসঙ্গে’ শিরোনামে এ চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘মতিঝিল অফিসের ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট বিভাগে রক্ষিত আপনাদের চলতি হিসাবের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্লিয়ারিং পেমেন্ট সিস্টেম (আন্তঃব্যাংক লেনদেন নিষ্পত্তি) সম্পন্ন হয়ে থাকে। যেমন– বাংলাদেশ অটোমেটেড চেক প্রসেসিং সিস্টেম (বিএসিপিএস), বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার নেটওয়ার্ক (বিইএফটিএন), ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ বাংলাদেশ (এনপিএসবি) ও রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট (আরটিজিএস) সিস্টেমে। তবে আপনাদের হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে, দীর্ঘদিন ধরে চলতি হিসাবের স্থিতি ঋণাত্মক, যা স্বাভাবিক ব্যাংকিং প্রক্রিয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বিষয়টি বারবার আপনাদের গোচরীভূত করা হলেও এ পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এমতাবস্থায় পত্র পাওয়ার ২০ কর্মদিবসের মধ্যে আবশ্যিকভাবে আপনাদের চলতি হিসাবের ঋণাত্মক স্থিতি সমন্বয়ের পরামর্শ দেওয়া হলো।’

এতে আরও বলা হয়, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সমন্বয়ে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে সম্পাদিত ‘ক্লিয়ারিং সেটেলমেন্টের জন্য নির্ধারিত হিসাবে পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থ সংরক্ষণ চুক্তি অনুসারে সব বা নির্দিষ্ট কোনো ক্লিয়ারিং প্ল্যাটফর্ম থেকে বিরত রাখা হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক সরাসরি কোনো জবাব দিতে রাজি হননি। তিনি বলেন, চলতি হিসাব রক্ষণাবেক্ষণ করে মতিঝিল অফিস। সেখান থেকে এ ধরনের চিঠি দিলেও তার জানার কথা নয়। শরিয়াহভিত্তিক পাঁচ ব্যাংকের চলতি হিসাব নেগেটিভ হওয়ার পরও কীভাবে লেনদেন করছে– এমন প্রশ্নের উত্তর দেননি তিনি। সাধারণভাবে এমন ক্ষেত্র নিয়ম কী তা জানতে চাইলে বলেন, চলতি হিসাব নেগেটিভ হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ‘প্রমিসরি নোট’-এর বিপরীতে ধার দেওয়া হয়। তবে এখন কোন উপায়ে, কীভাবে শরিয়াহ ব্যাংকগুলো টাকা নিচ্ছে তিনি জানেন না।

প্রমিসরি নোট হলো এক ধরনের প্রতিশ্রুতিপত্র। এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট পক্ষ পাওনাদারের কাছ থেকে আদায় সাপেক্ষে নতুন করে যার কাছ থেকে অর্থ নিচ্ছে তাকে সবার আগে পরিশোধের লিখিত প্রতিশ্রুতি দেয়। এর মানে এসব ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণ আদায় বা অন্য যে কোনো পাওনা আদায়ের পর প্রথম কেন্দ্রীয় ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, বিভিন্ন সময়ে সংকটে পড়া ব্যাংকের সিআরআর, এসএলআর ঘাটতি হলেও চলতি হিসাব নেতিবাচক হওয়ার ঘটনা শোনা যায়নি। আর হঠাৎ কোনো ব্যাংকের সিআরআর, এসএলআর ঘাটতি হলে এক দিনের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ওভার ড্রাফট (ওডি) সুবিধা দেওয়া হয়। পরদিন ওই ব্যাংক যে করেই হোক, তা সমন্বয় করে। তবে এভাবে মাসের পর মাস অ্যাকাউন্ট ঋণাত্মক থাকা কিংবা টাকা দেওয়ার ঘটনা আগে ঘটেনি।

বাংলাদেশ ব্যাংক আদেশ, ১৯৭২ এর ৩৬(১) ধারা অনুযায়ী আমানতকারীদের সুরক্ষায় প্রতিটি ব্যাংকের মোট তলবি ও মেয়াদি দায়ের একটি অংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখতে হয়। বর্তমানে প্রচলতি ধারার ব্যাংকের জন্য এ হার ১৭ শতাংশ। আর শরিয়াহভিত্তিক পরিচালিত ব্যাংকের জন্য সাড়ে ৯ শতাংশ। ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোকে সরকারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগের বিপরীতে সহজে বিনিময়যোগ্য সম্পদ বা এসএলআর হিসেবে সাড়ে ৫ শতাংশ এবং বিধিবদ্ধ নগদ জমা সংরক্ষণ বা সিআরআর হিসেবে ৪ শতাংশ নগদে রাখতে হয়। কোনো ব্যাংক যদি সিআরআর রাখতে না পারে তাহলে অসংরক্ষিত অংশের ওপর ৯ শতাংশ হারে দণ্ডসুদ দিতে হয়। আর এসএলআর রাখতে ব্যর্থ অংশের ওপর ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে জরিমানা আরোপ হয়। কোনো ব্যাংক ধারাবাহিকভাবে ৪২ দিন ব্যর্থ হলে পরে বাংলাদেশ ব্যাংক আদেশের ৩৬(৫)(এ) অনুযায়ী প্রত্যেক পরিচালককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করতে হবে। এরপরও বিধিবদ্ধ জমা সংরক্ষণে ব্যর্থ হলে ৩৬(৫)(বি) অনুযায়ী নতুন আমানত নেওয়া বন্ধ করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, অনেক দিন ধরে এসব ব্যাংক সিআরআর, এসএলআর রাখতে পারছে না। এসএলআরের জন্য এসব ব্যাংকের কাছে যেসব ট্রেজারি বিল ও বন্ড ছিল তা বন্ধক রেখে ধার করা টাকা খরচ করে ফেলেছে। নতুন করে ধার নেওয়ার কোনো উপায় উপকরণ নেই। কেবল আগে নেওয়া ধারের মেয়াদ বাড়াচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিভিন্ন পুনঃঅর্থায়নের টাকা গ্রাহকের কাছ থেকে আদায় করলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ফেরত দিচ্ছে না। যে কারণে কোনো কোনো ব্যাংক এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে খেলাপি হয়ে নতুন করে পুনঃঅর্থায়ন পাচ্ছে না। অথচ ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে কোনো শাস্তি না দিয়ে উল্টো সব ধরনের নিয়মনীতি উপেক্ষা করে টাকা ছাপিয়ে এসব ব্যাংকে দিয়ে আসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসের সাসপেন্স অ্যাকাউন্ট থেকে ব্যাংকগুলোকে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসের সঙ্গে প্রতিটি ব্যাংকের একটি চলতি হিসাব থাকে। এই হিসাব থেকে ব্যাংকের সিআরআর, এসএলআর সংরক্ষণ, আন্তঃব্যাংক চেক ক্লিয়ারিং, অনলাইন অর্থ স্থানান্তর, এটিএম ও পসে লেনদেন নিষ্পত্তি এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে দেওয়া পুনঃঅর্থায়নসহ যাবতীয় লেনদেন নিষ্পত্তি হয়। বিদ্যমান নিয়মে কোনো ব্যাংকের চলতি হিসাবে টাকা না থাকলে লেনদেন হবে না– এটাই স্বাভাবিক। তবে শরিয়াহভিত্তিক পাঁচ ব্যাংককে বিশেষ ধারের কারণে অ্যাকাউন্ট ঋণাত্মক হলেও লেনদেন অব্যাহত আছে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ২:১১ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩

bankbimarkhobor.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

[abm_bangladesh_map]
advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক
মোঃ ইসলাম শেখ
কার্যালয়

৭৯, সিদ্ধেশ্বরী সার্কুলার রোড, (৩য় তলা, বাম দিক), সিদ্ধেশ্বরী, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭

01760742336

[email protected]