
ব্যাংকের খবর ডেস্ক | সোমবার, ০৮ এপ্রিল ২০২৪ | প্রিন্ট | 71 বার পঠিত
সংগৃহীত ছবি
নিজেদের ঈদ উদযাপন ভুলে পেশাগত দায়িত্ব পালনে তৎপর রয়েছেন নগরীর এটিএম বুথগুলোর নিরাপত্তাকর্মীরা। চোখের সামনে হাজার হাজার মানুষের ঈদের কেনাকাটার টাকা উত্তোলন দেখলেও, স্বল্প আয়ের এই মানুষগুলোর ঈদ উৎসবে নেই কোনো জৌলুস।
রোববার (৭ এপ্রিল) রাজধানীর বিভিন্ন এটিএম বুথের নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত বেশ কয়েকজন কর্মীর সঙ্গে আলাপে এ তথ্য পাওয়া যায়।
ঈদুল ফিতরের বাকি আর মাত্র কয়েকদিন। ঈদকে সামনে রেখে বিপণিবিতানগুলো থেকে শুরু করে ভোগ্যপণ্যের বাজারে কেনাকাটায় ব্যস্ত নগরবাসী। যে কারণে এসময় নগরের এটিএম বুথগুলোতে রয়েছে উপচে পড়া ভিড়। লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা তুলতে হচ্ছে ব্যাংক গ্রাহকদের। আর তাদের সহযোগিতায় ২৪ ঘণ্টাই পেশাগত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন বুথগুলোর নিরাপত্তাকর্মীরা। সারাদিন চোখের সামনে টাকার মিছিল দেখলেও তারা সন্তুষ্ট থাকছেন নিজেদেরে স্বল্পআয়ের এই কর্মস্থলে।
পাশাপাশি ঈদ উৎসবেও এই এটিএম বুথের নিরাপত্তাকর্মীদের জীবনে মেলে না ছুটি; পান না অবসর। দায়িত্ব পালন করতে হয় ঈদের দিনেও। যেখানে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে সবাই ছুটে যান আপন ঠিকানায়, সেখানে স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপনে অংশ নিতে পারেন না এটিএম বুথের অধিকাংশ নিরাপত্তাকর্মী।
ফার্মগেটে প্রাইম ব্যাংকের এটিএম বুথের নিরাপত্তাকর্মী খাগড়াছড়ির সিদ্দিক মিয়ার সঙ্গে কথা হলো। ঈদ নিয়ে বাড়তি কোনও আগ্রহ কিংবা উচ্ছ্বাস নেই তার মধ্যে। তিনি বলেন, ‘পরিবারের জন্য টাকা আয় করা হয়, অথচ পরিবারের সঙ্গে ঈদ পালন করা হয় না। মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় পরিবার নিয়ে ঈদ করার জন্য। বাচ্চাকাচ্চাদের নিয়ে দেশের বাড়ি যাওয়ার জন্য। কিন্তু কর্মক্ষেত্রের কারণে যেতে পারি না। এই পেশায় আগে কাজ, তারপর উদযাপন।’
তিনি আরও বলেন, ঈদে সবাই ছুটি পান না। ৪ জন এই বুথে ডিউটি করেন। এর মধ্যে কপাল ভালো থাকলে কেউ কেউ ছুটি পান, বাকিদের দেশের মানুষের জন্যই কাজে নিয়োজিত থাকতে হয়। ঈদের দিনও সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ডিউটি করতে হবে বলেও জানান সিদ্দিক মিয়া।
মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এটিএম বুথের দায়িত্বে নিয়োজিত ৫৫ বছর বয়সি আলম শেখের সঙ্গেও কথা হয়। তিনি বলেন, ঈদের ছুটি যে থাকে না, তা না। যারা আগে যেতে চান, যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে পরের ঈদে আর ছুটি পাবেন না তিনি। এবার ঈদে তার ছুটি নেয়া হয়েছে। গ্রামে গিয়ে এবার ঈদ উদ্যাপন করা হবে বলেও জানান তিনি।
তবে গ্রামে গেলেও ঈদ উৎসব এতো জৌলুসে কাটবে না বলে জানান আলম শেখ। তিনি বলেন, ঈদে সবার একটা প্রত্যাশা থাকে নতুন কিছু কেনার এবং একটু স্বচ্ছলভাবে উদযাপন করতেও ইচ্ছে করে। বেতন-বোনাস যা পাওয়া যায়, তা দিয়ে এই বাজারে কোনো রকমভাবে ঈদ কেটে যাবে। গ্রামে আসা-যাওয়ার খরচের পর সামান্য শখ-আহ্লাদ পূরণ করতে গেলেও, ঢাকায় এসে কষ্টে থাকতে হবে বলে জানান তিনি।
ময়মনসিংহের নেত্রকোনায় গ্রামের বাড়ি আলম শেখের। ১০ বছর ধরে নিরাপত্তাকর্মীর চাকরি করেন তিনি। ৫ বছর হলো স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকাতেই সংসার তার।
ছোটবেলার ঈদের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, সেই সময়কার আনন্দের সঙ্গে বর্তমানের অনেক পার্থক্য। বাবা-মা কাপড় কিনে দিতেন। সবাই মিলে আনন্দ করতাম। এরপরে যখন এই চাকরিতে এসেছি, সে সময় নিজের ছেলেমেয়েরাই বাড়িতে থাকতো। তখন বাড়ি যেতে না পারলে অনেক খারাপ লাগতো। তবে এখন আর খারাপ লাগে না, বরং নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন বলে জানান তিনি।
রাজধানীর বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সে ব্র্যাক ব্যাংকের নিরাপত্তাকর্মী দেলোয়ার হোসেন। সারাদিন হাজার হাজার মানুষের টাকা উত্তোলন দেখেন। নতুন গ্রাহক যারা এটিএমের ব্যবহার জানেন না, তাদেরকে টাকা তুলতে সহায়তা করেন তিনি। চোখের সামনে এতো টাকা দেখে নিজের কাছে কেমন লাগে জানতে চাইলে তিনি বলেন,
এটাই আমাদের কাজ। মানুষকে সাহায্য করতে ভালোই লাগে। অনেক রকম মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়, তাদের অনেকেই ধন্যবাদ দিয়ে যান। তাই টাকা নিয়ে কখনও আফসোস লাগে না। আল্লাহ যা তৌফিক দিয়েছেন, তাতেই চলে যাচ্ছে।
বোনাস পেয়েছেন, বেতন ২-১ দিনের মধ্যে পেয়ে যাবেন জানিয়ে দেলোয়ার বলেন, শখ করে এবার নিজের জন্য কেনাকাটা বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সেই করেছেন তিনি। রংপুরে থাকা বাবা-মায়ের জন্য টাকাও পাঠিয়েছেন এরমধ্যে। তাই ঈদের আগেই হাত খালি হয়ে গেছে।
ঈদে বাড়িতে থাকলে কী হতো এমন প্রশ্নে দেলোয়ার বলেন, ‘আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ি বেড়াতে যাওয়া হতো। তারাও আসতো। আমাদের কাজ অনেক ছোট হলেও দায়িত্বটা অনেক বড়; তাই মন চাইলেও বাড়ি যাওয়া হয় না।’
Posted ১১:৫৩ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ০৮ এপ্রিল ২০২৪
bankbimarkhobor.com | Mr. Islam