চেলসির জয়ের নায়ক কোল পামার।
ট্রফি হাতে তুলে দিতে মঞ্চে আসেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাকে দেখা মাত্রই গ্যালারি থেকে শুরু হয় প্রবল দুয়োধ্বনি। চেলসির শিরোপা উদযাপনের মধ্যেই ট্রাম্প কিছুক্ষণ মঞ্চে দাঁড়িয়ে ছিলেন। চারপাশে আতশবাজির ঝলক আর ‘ব্লু ইজ দ্য কালার’ সঙ্গীতের গর্জন।
ম্যাচের আগে পিএসজিকে মনে হচ্ছিল রীতিমত অপ্রতিরোধ্য। ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নরা শুরুতে বলের দখল প্রায় ৭০% সময় রাখলেও রবার্ট সানচেজকে কোনোভাবেই পরাস্ত করতে পারেনি। উল্টো চেলসি তাদের নিখুঁত পরিকল্পনায় বারবার পিএসজিকে ঘায়েল করেছে।
ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গেই পিএসজি খেলোয়াড়রা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। মাঠেই শুরু হয় হাতাহাতি। গ্যালারিতে কোচ লুইস এনরিকে প্রায় হোয়াও পেদ্রোর গলায় হাত দিয়ে ফেলেছিলেন। ঠিক যেমন ম্যাচের শেষ দিকে হোয়াও নেভেস চেলসির ডিফেন্ডার মার্ক কুকুরেয়ার চুল ধরে টান দিয়ে দেখেছেন লাল কার্ড। পিএসজির ভগ্নস্বপ্নের দিন শেষ হলো লজ্জাজনকভাবে।
চেলসির কাছে এর থেকে ভালো কোনো চিত্রনাট্য কেউ আশা করতে পারত না। ম্যাচের শুরু থেকেই ব্লুজদের শরীরী ভাষা ছিল অনেকটাই নির্ভার, নির্ভীক। শুরুর ৩০ মিনিটেই তারা এই ফাইনাল কার্যত জিতেই নেয়। অথচ সবাই ভেবেছিল, এই কাজটা করবে পিএসজি।
কুকুরেয়া আগেই বলেছিলেন, ‘আমরা জানি ওরা শুরুতে খুব তীব্র, খুবই দ্রুত।‘ সত্যিই ম্যাচের দেড় মিনিটের মাথায় উসমান দেম্বেলেকে ঠেকাতে সানচেজকে দ্রুত লাফিয়ে বল ক্লিয়ার করতে হয়েছিল। তবে আসল আক্রমণের শুরুটা চেলসিরই। দশ মিনিটের মাথায় পামারের বাঁকানো শট পোস্টের সামান্য বাইরে দিয়ে চলে যায়। সেটাই ছিল পূর্বাভাস— পরের আক্রমণের শেষে যেন সত্যিই উদযাপনটা করা যায়।
২২ মিনিটে সানচেজের লম্বা ডায়াগোনাল পাস পিএসজির রক্ষণের ভুলে মালো গুস্তোর পায়ে চলে যায়। প্রথম শট ব্লক হলেও পুনরায় বল পেয়ে গুস্তো সেটি বাড়িয়ে দেন পামারের দিকে। পামার ঠাণ্ডা মাথায় বাঁ পায়ে শট নেন, বল সরাসরি জালে।
ঠিক ৮ মিনিট পর, ডান দিক থেকে প্রায় একই রকম আক্রমণ। পামার আবারও ডানদিকে। এবার সাইডলাইনের কাছে গুস্তোর দিকে নজর দিয়ে ডিফেন্সকে বিভ্রান্ত করেন। ছোট্ট এক শরীরী ডামি আর উধাও মারকিনিয়োস ও বেরালদো। একই জায়গা দিয়ে আবার বল জালে। আধঘণ্টার মধ্যে তিনটি একই রকম শট—দুটি গোল। চেলসির হাতে শিরোপা তখন স্পষ্টই দেখতে পাচ্ছিলেন অনেকে।
ম্যাচ শেষে চেলসির উল্লাস।
পামার এখানেই থামেননি। বিরতির ঠিক আগে মাঝমাঠ থেকে বল টেনে নিয়ে নিখুঁত এক পাস বাড়ান হোয়াও পেদ্রোর দিকে। পেদ্রো গোলরক্ষক দোন্নারুমার মাথার ওপর দিয়ে বল চিপ করে জালে পাঠান, ৩-০!
প্রথমার্ধে চেলসির পাস সংখ্যা ছিল মাত্র ১২৬। কিন্তু সেই কম পাসেই তৈরি তিনটি অনবদ্য গোল। বিরতিতে পিএসজির ড্রেসিংরুম থেকে রাগ-হতাশার শব্দই বেরিয়েছে হয়তো বেশি। দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণের পরিমাণও বাড়ায় প্যারিসিয়ানরা। রবার্ট সানচেজকে কয়েকবার দুর্দান্ত সেভ করতে হয়। ভিটিনিয়ার শট আটকানো থেকে দেম্বেলের ক্লোজ রেঞ্জ হেড—সবই সামলান তিনি।
শেষ দিকে চেলসি বল দখলে রেখে সময় নষ্ট করতে থাকে। গ্যালারি থেকে ওঠে ‘ওলে, ওলে’ ধ্বনি। ব অদলি হিসেবে নামা চেলসি স্ট্রাইকার লিয়াম ডেলাপ গোল পেতে পারতেন। দুবার কাছাকাছি গিয়েও দোন্নারুমার সেভে স্কোরশিটে নাম তুলতে পারেননি। কিন্তু তাতে কোনো ক্ষতি হয়নি চেলসির। কোনো নাটকীয় প্রত্যাবর্তন ঘটেনি পিএসজিরও।
ম্যাচ শেষে ‘ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নস ২০২৫’ লেখা টি-শার্ট গায়ে জড়িয়ে নেয় এনজো মারেসকার চেলসি। শুরু হয় উদযাপন। আন্ডারডগ থেকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হবার উদযাপন।