বুধবার ১৩ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দল নির্বাচন বিতর্কে কোথায় ঢাকা ব্যতিক্রম

  |   মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট ২০২৫   |   প্রিন্ট   |   24 বার পঠিত

দল নির্বাচন বিতর্কে কোথায় ঢাকা ব্যতিক্রম

জাতীয় ক্রিকেট লিগে সাতবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ঢাকা বিভাগ

জাতীয় ক্রিকেট লিগের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে একসময় বিস্তর অভিযোগ শোনা যেত। খেলোয়াড়দের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা, যাতায়াত, মাঠ—অভিযোগ কী নিয়ে না ছিল ! দেশের প্রধানতম প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের আসরটা যে ক্রিকেটাররা তখন ‘পিকনিক মুডে’ খেলতেন, তা তো এমনি এমনি নয়।

এখন দিন বদলেছে, বেড়েছে জাতীয় লিগের সুযোগ-সুবিধা। একেকটি জাতীয় লিগ আয়োজনে বিসিবি খরচ করছে ১৪-১৫ কোটি টাকা। খেলোয়াড়দের দৈনিক ভাতা, ম্যাচ ফি, বেতন বেড়েছে। উন্নত হয়েছে যাতায়াত ও থাকার ব্যবস্থা। সে তুলনায় বেশির ভাগ বিভাগই পারেনি নিজেদের সুসংগঠিত করতে। আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা হলে আস্তে আস্তে অনেক সমস্যারই সমাধান হবে বলে আশা। কিন্তু তাই বলে কি এত দিনে খেলোয়াড় নির্বাচন প্রক্রিয়াটাও ঠিক হবে না!

দল নির্বাচনের দায়িত্ব পুরোপুরি বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার হাতে থাকার সময় অভিযোগ আসত স্বজনপ্রীতির। মামা-চাচার জোরে যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও অনেকে হয়ে গিয়েছিলেন ‘প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটার’। বিতর্ক এড়াতে পরে দল নির্বাচন প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনা হয়। অনেক বছর ধরেই নিয়মটা এ রকম—বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা থেকে ৩০ জনের প্রাথমিক খেলোয়াড় তালিকা দেওয়া হবে। সেখান থেকে জাতীয় নির্বাচক কমিটি সংশ্লিষ্ট বিভাগের কোচ-অধিনায়কদের মতামত নিয়ে ১৫ জনের চূড়ান্ত দল গঠন করবে। লিগের মাঝপথে কোনো খেলোয়াড় পরিবর্তন করতে হলে সেটাও জাতীয় নির্বাচক কমিটিকে জানিয়ে করতে হবে।

২৭তম জাতীয় লিগ শুরু হবে অক্টোবরে

২৭তম জাতীয় লিগ শুরু হবে অক্টোবরে

বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা কীভাবে প্রাথমিক দল নির্বাচন করবে, সে দিকনির্দেশনাও দেওয়া আছে বিসিবি থেকে। বিসিবি থেকে নিয়োগ পাওয়া বিভাগীয় কোচ, অধিনায়ক এবং প্রয়োজনে বিভাগের কোনো সাবেক ক্রিকেটারকে নিয়ে এটা করার কথা।

কিন্তু এই নিয়ম অনেক সময়ই মানা হয় না। এবার ২৭তম জাতীয় লিগ সামনে রেখে দুটি বিভাগের ৩০ জনের প্রাথমিক দল গঠন নিয়ে তো বড় বিতর্কই সৃষ্টি হয়েছে। প্রাথমিক দল নিয়ে বরিশাল বিভাগের সিনিয়র ক্রিকেটারদের দ্বন্দ্বের কথা সংবাদমাধ্যমেও এসেছে। পরে অবশ্য বিষয়টি সুরাহা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিসিবির টুর্নামেন্ট কমিটির প্রধান আকরাম খান।

রাজশাহীর বিভাগের দল নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছেন মাইশুকুর রহমান

রাজশাহীর বিভাগের দল নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছেন মাইশুকুর রহমান

রাজশাহীর বিভাগের দল নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছেন মাইশুকুর রহমানছবি: মাইশুকুরের ফেসবুক
তবে নতুন বিতর্ক রাজশাহী বিভাগের প্রাথমিক দল নিয়ে। অভিযোগ উঠেছে, রাজশাহীর প্রাথমিক দল নির্বাচন প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তার করেছেন বগুড়ার ক্রিকেটার মাইশুকুর রহমান, যিনি নিজেও আছেন দলে। রাজশাহী থেকে ৩০ জনের যে দল টুর্নামেন্ট কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছে, তাতে দুই বিভাগীয় কোচ শাহনেওয়াজ শহীদ ও আলমগীর কবিরের সঙ্গে স্বাক্ষর করেছেন বর্তমান ক্রিকেটার মাইশুকুরও। অধিনায়ক ছাড়া আর কোনো বর্তমান ক্রিকেটার দল নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকতে পারেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে রাজশাহীর এই প্রক্রিয়া।

রাজশাহী দল–সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের দাবি, দুই বিভাগীয় কোচের সঙ্গে দল নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকার কথা ছিল জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদের। কিন্তু বিভাগীয় ক্রীড়ার সংস্থার নবগঠিত অ্যাডহক কমিটিতে থাকলেও আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব না পাওয়ায় মাসুদ নিজেই এতে সম্পৃক্ত হননি। ওদিকে একটি বড় রাজনৈতিক দলের পরিচয়ে পুরো প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তার করেছেন মাইশুকুর।

দল নির্বাচনে পরে বিভাগের আটটি জেলার কোচদের মতামত নেওয়া হলেও খেলোয়াড় নির্বাচন থেকে শুরু করে অনুশীলন—সবকিছুই নাকি নিয়ন্ত্রণ করছেন মাইশুকুর! পরিস্থিতি এমন যে এই অস্বস্তিকর পরিবেশের কারণে জাতীয় দলের দুই ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম ও নাজমুল হোসেন রাজশাহীর হয়ে না খেলার কথাও চিন্তা করেছেন। রাজশাহীর ৩০ জনের প্রাথমিক দলে অবশ্য শেষ পর্যন্ত তাঁরা দুজনই আছেন, তবে মুশফিক জাতীয় নির্বাচক কমিটির কাছে অনুরোধ জানিয়ে রেখেছেন, তাঁকে যেন রাজশাহী দলে না রেখে সিলেট দলে রাখা হয়।

তবে কাল রাতে মুঠোফোনে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মাইশুকুর দিয়েছেন ভিন্ন ব্যাখ্যা, ‘কোচরা বয়সভিত্তিক ক্রিকেট নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকেন। ঢাকার লিগগুলোতে রাজশাহীর কারা খেলছেন সে ব্যাপারে তাঁদের ভালো ধারণা থাকে না। এ কারণে আমাকে বলা হয়েছিল পাইলট ভাই (খালেদ মাসুদ) ও শান্তকে (নাজমুল হোসেন) নিয়ে ৩০ জনের দল করতে। ব্যক্তিগত কারণে পাইলট ভাই আর শান্ত সময় দিতে পারেননি। পরে দুই বিভাগীয় কোচের সঙ্গে আটজন জেলা কোচের মতামত নিয়ে দল নির্বাচন করেছি।’ বর্তমান ক্রিকেটার হিসেবে তিনি এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকতে পারেন কি না, এমন প্রশ্নে মাইশুকুর বলেছেন, ‘যেহেতু আমি ব্রাদার্সের হয়ে ঢাকা লিগে খেলি, প্রিমিয়ার ও প্রথম বিভাগের খেলোয়াড়দের ব্যাপারে আমি মতামত দিয়েছি।’

নাজমুল হোসেন ও মুশফিকুর রহিম, ঘরোয়া প্রথম শ্রেনির ক্রিকেটে দুজনেরই দল রাজশাহী বিভাগ

নাজমুল হোসেন ও মুশফিকুর রহিম, ঘরোয়া প্রথম শ্রেনির ক্রিকেটে দুজনেরই দল রাজশাহী বিভাগ

মজার ব্যাপার হলো, ২০১৮ সালের পর রাজশাহীর হয়ে আর জাতীয় লিগে খেলাই হয়নি মাইশুকুরের। গত কয়েক মৌসুম তিনি খেলেছেন রংপুর ও সিলেট বিভাগের হয়ে।
নাজমুল হোসেন ও মুশফিকুর রহিম, ঘরোয়া প্রথম শ্রেনির ক্রিকেটে দুজনেরই দল রাজশাহী বিভাগ
নাজমুল হোসেন ও মুশফিকুর রহিম, ঘরোয়া প্রথম শ্রেনির ক্রিকেটে দুজনেরই দল রাজশাহী বিভাগএএফপি
মজার ব্যাপার হলো, ২০১৮ সালের পর রাজশাহীর হয়ে আর জাতীয় লিগে খেলাই হয়নি মাইশুকুরের। গত কয়েক মৌসুম তিনি খেলেছেন রংপুর ও সিলেট বিভাগের হয়ে। জাতীয় লিগের অন্যান্য দল নিয়ে এখন পর্যন্ত বড় কোনো বিতর্কের কথা শোনা না গেলেও টুকটাক অভিযোগ আছে। তবে দল নির্বাচন প্রক্রিয়ায় উজ্জ্বল ব্যতিক্রম বলতে হবে ঢাকা বিভাগকে। এবার অত্যন্ত গোছানো এবং পেশাদারভাবেই জাতীয় লিগ নিয়ে মাঠে নেমেছে ঢাকা।

গত ৬ আগস্ট অনুষ্ঠিত ঢাকা বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সভায় জাতীয় দলের তিন সাবেক ক্রিকেটার এহসানুল হক, মেহরাব হোসেন ও নাদিফ চৌধুরীকে নিয়ে তিন সদস্যের খেলোয়াড় বাছাই কমিটি গঠন করা হয়, দলও নির্বাচন করেছেন তাঁরাই। এ ছাড়া ২০২৫-২৬ মৌসুমে ঢাকা বিভাগীয় দলের সার্বিক তত্ত্বাবধানের জন্য গঠন করা হয়েছে তিন সদস্যের মনিটরিং কমিটি, যাতে আছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও বিসিবির প্রধান ম্যাচ রেফারি রকিবুল হাসান, বিসিবির সাবেক পরিচালক খন্দকার জামিল উদ্দিন ও ছাত্র প্রতিনিধি সিফাত সাদিক খান। গঠিত হয়েছে চার সদস্যের স্পনসর কমিটিও। সিলেটের প্রাথমিক দলও নির্বাচন করেছে বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা গঠিত পাঁচ সদস্যের নির্বাচক কমিটি।

‘সব বিভাগেই বিসিবির কোচ আছেন। তাঁরাই তো বিসিবির প্রতিনিধি। এখন তাঁদের কথা যদি না মানা হয়, তাহলে কী করার আছে!
আকরাম খান, বিসিবির টুর্নামেন্ট কমিটির প্রধান
জাতীয় লিগের সব খরচ বহন করে বিসিবি। কোচ, ম্যানেজার, ট্রেনার, ফিজিও—সবই বিসিবির দেওয়া। দল নির্বাচন প্রক্রিয়াটিকে বিতর্কমুক্ত করতে প্রতিটি বিভাগে বিসিবি থেকে একজন নির্বাচকও দেওয়ার প্রস্তাব জাতীয় লিগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক সাবেক ক্রিকেটারের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই ক্রিকেটারের মত, প্রাথমিক দল নির্বাচনেই কোচ, অধিনায়কের সঙ্গে বিসিবি নির্বাচক প্রতিনিধি যোগ হলে বিতর্কের শঙ্কা কমে আসবে। জাতীয় লিগের পাশাপাশি জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ এবং জেলা ও বিভাগের বয়সভিত্তিক পর্যায়েও তাঁরা কাজ করতে পারেন। ভবিষ্যতে এ রকম ভাবনার সুযোগ আছে কি না জানতে চাইলে বিসিবির টুর্নামেন্ট কমিটির প্রধান আকরাম খান একটু অসহায়ত্বই যেন প্রকাশ করলেন, ‘সব বিভাগেই বিসিবির কোচ আছেন। তাঁরাই তো বিসিবির প্রতিনিধি। এখন তাঁদের কথা যদি না মানা হয়, তাহলে কী করার আছে!”

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৫:১৫ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট ২০২৫

bankbimarkhobor.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

[abm_bangladesh_map]
advertisement
advertisement
advertisement
সম্পাদক
মোঃ ইসলাম শেখ
কার্যালয়

৭৯, সিদ্ধেশ্বরী সার্কুলার রোড, (৩য় তলা, বাম দিক), সিদ্ধেশ্বরী, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭

01760742336

[email protected]