
| মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ | প্রিন্ট | 170 বার পঠিত
৬ হাজার কোটি টাকার বিমা দাবি বকেয়া
দেশে বিমা দাবির বকেয়ার পরিমাণ ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। বকেয়া দাবি দ্রুত নিষ্পত্তি করতে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে (আইডিআরএ) নির্দেশ দিয়েছে সরকার। গ্রাহকদের প্রতারণা থেকে রক্ষা করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। অন্তর্বর্তী সরকার দেশের আর্থিক খাত সংস্কার কার্যক্রম শুরু করেছে। তারই অংশ হিসেবে বকেয়া বিমা দাবি নিষ্পত্তির জন্য কার্যকর কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চেয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। সেপ্টেম্বর শেষে লাইফ এবং নন লাইফ বিমার দাবি বকেয়ার পরিমাণ ৬ হাজার ২১৫ কোটি টাকা। যা বিমা খাতের জন্য অস্বাভাবিক বলেছেন সরকারের সংশ্লিষ্টরা।
এ ছাড়াও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের পরবর্তী সভায় বিমা পলিসির সংখ্যা এবং দাবি নিষ্পত্তির সংখ্যা জমা দিতে আইডিআরএকে বলা হয়েছে। কর্মকর্তারা বলেছেন, আইডিআরএকে বিমা দাবি নিষ্পত্তিতে পিছিয়েপড়া কোম্পানির একটি তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে এবং এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে কি কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে তার পরিকল্পনা জানতে চাওয়া হবে। আইডিআরের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য মতে, সেপ্টেম্বর শেষে লাইফ ইন্স্যুরেন্স খাতে ৩ হাজার ৩৯০ কোটি টাকার দাবি নিষ্পত্তি হয়নি। একই সময় পর্যন্ত নন লাইফ কোম্পানির বিমা দাবি বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা। এ ছাড়াও নন লাইফ বিমা খাতে ১৬ হাজার ৬৬৪টি দাবি অনিষ্পন্ন রয়েছে।
যে সব কোম্পানি অনিয়ম এবং অর্থ আত্মসাতের কারণে আর্থিক সক্ষমতা হারিয়েছে, বিমা দাবি নিষ্পত্তি করতে পারছে না। এমন কয়েকটি বিমা কোম্পানি অবসায়ন করতে গত বছর সরকারকে পরামর্শ দিয়েছিল আইডিআরএ। এই বিমা কোম্পানিগুলো তাদের আর্থিক অবস্থা উন্নয়নের জন্য আর কোনো চেষ্টাও করেনি বলে জানিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। কর্মকর্তারা বলেছেন, ধারাবাহিকভাবে আর্থিক অবস্থা দুর্বল হওয়া কোম্পানিগুলোকে একীভূত হওয়ার সুপারিশ করেছে আইডিআরএ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিছু কোম্পানির বিমা দাবি পরিশোধে ব্যর্থতা পুরো খাতের গ্রাহকদের আস্থা নষ্ট করেছে। এসব কোম্পানির আর্থিক অবস্থার উন্নতি না হলেও ওই কোম্পানিগুলো অবসায়ন বা একীভূত করার দিকে যায়নি বিগত আওয়ামী লীগ সরকার।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, বিমা কোম্পানিগুলোতে বিপুলসংখ্যক গ্রাহকের পলিসি থাকার পাশাপাশি হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের কারণে সরকার অবসায়ন বা একীভূত করার মতো সিদ্ধান্ত নেয়নি। একটি কোম্পানি অবসায়ন বা একীভূতকরণ একটি জটিল প্রক্রিয়া এবং এর সঙ্গে বিপুল পরিমাণ দাবি নিষ্পত্তিরও সম্পর্ক রয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমরা চেষ্টা করছি, কোম্পানিগুলোতে কঠোর নিয়মের আওতায় নিয়ে আসার জন্য। যাতে বিমা গ্রাহকরা তাদের টাকা ফেরত পান এবং একই সময়ে কোম্পানিগুলো ভালো অবস্থানে ফিরতে পারে।
গত বছর বাংলাদেশে বিমার ব্যবসার প্রবৃদ্ধি হয়েছে ধীর গতিতে, যদিও ২০২২ সালেও ব্যবসা সংকুচিত ছিল। বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশনের (বিআইএ) তথ্য মতে, ২০২৩ সালে জীবন বিমার তহবিল ১ দশমিক ৭৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩২ হাজার ১৫৩ কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা ২০২২ সালে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ কমে ৩১ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা ছিল। ২০২১ সালে জীবন বিমার তহবিল ছিল ৩২ হাজার ৭৪৮ কোটি টাকা। তবে দাবি নিষ্পত্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রিমিয়াম আয় কমে যাওয়া এবং বিনিয়োগ কমার কারণে ২০২৩ সালে বিমা ব্যবসার প্রবৃদ্ধি কমেছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা। তারা বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে প্রিমিয়াম নবায়ন আয় কমে গেছে। তবে ২০২৪ সালে সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ বেড়েছে, যা আগামী বছরের আর্থিক বিবৃতিতে প্রতি ফলিত হবে। বর্তমান সময়কে বিমা শিল্পের জন্য চ্যালেঞ্জিং হিসেবে বর্ণনা করে উদ্যোক্তারা বলেন, আমরা আশা করি, ফিক্সড ডিপোজিট রিসিপ্ট (এফডিআর) এবং ট্রেজারি বিনিয়োগ বেশি হওয়ার কারণে জীবন বিমা তহবিল ২০২৪ সালে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে।
খাত সংশ্লিষ্টরা আরও বলেন, আবাসন এবং শেয়ারবাজারের মতো খাতগুলোতে বিনিয়োগে স্থবিরতার প্রভাব জীবন তহবিলের ওপর পড়েছে। ২০১৯ সালে জারি করা নিয়মে, জীবন বিমা কোম্পানিগুলোকে তহবিলের কমপক্ষে ৩০ শতাংশ সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করতে হয়। বাকি ৭০ শতাংশের মধ্যে ১০ শতাংশ নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে (এনবিএফআই) জমা রাখতে পারে, মোট সম্পদের ৬০ শতাংশ পর্যন্ত নির্ধারিত ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট হিসেবে বিনিয়োগ করতে পারে। জীবন বিমা কোম্পানিগুলোর সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভার মধ্যে স্থাবর সম্পত্তিতে ২০ শতাংশ বিনিয়োগের অনুমতি রয়েছে। জীবন বিমা তহবিলের প্রবৃদ্ধিতে ধীরগতির পরও, বেসরকারি খাতের জীবন বিমা কোম্পানিগুলোর মোট বিনিয়োগ ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে ৩৬ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।
Posted ১১:০৯ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪
bankbimarkhobor.com | Mr. Islam