
| বৃহস্পতিবার, ০২ জানুয়ারি ২০২৫ | প্রিন্ট | 49 বার পঠিত
রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা বীমা খাতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ
এসেছে নতুন বছর, ২০২৫। বিদায় নিয়েছে ২০২৪। নতুন বছরে আছে নানামুখী চ্যালেঞ্জ। সম্ভাবনাও রয়েছে অপার। চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এগিয়ে যেতে পারলেই ঘুরে দাঁড়াবে দেশের বীমা খাত। ২০২৫ সালের বিষয়ে এমনটাই প্রত্যাশা দেশের লাইফ ও নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর মুখ্য নির্বাহীদের।
তাদের মতে, ২০২৫ সালে রাজনৈতিক অস্থিরতার যেমন শঙ্কা রয়েছে; তেমনি অর্থনৈতিক সংকট তৈরির সম্ভাবনাও রয়েছে। কারণ, বীমার জন্য যেমন নতুন বিনিয়োগ বা নতুন উদ্যোগের প্রয়োজন তেমনি বিনিয়োগের জন্যও প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। যা এখন অনেকটাই অনিশ্চিত।
মুখ্য নির্বাহীদের মতে, নিয়ন্ত্রক সংস্থার নেতৃত্বে স্থিতিশীলতা বীমা খাতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কমপেনসেশন বাড়িয়ে পুনরায় এ্যাক্ট লায়াবিলিটি ইন্স্যুরেন্স বাধ্যতামূলক করাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বীমার বাধ্যবাধকতা আরোপ এখন সময়ের দাবি। একইসঙ্গে প্রয়োজন বীমা খাতের প্রসারে সরকারের নানামুখী উদ্যোগ।
মুখ্য নির্বাহীদের সংগঠন বিআইএফ’র ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ও জেনিথ ইসলামী লাইফের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম নুরুজ্জামান বলেন, বীমা খাতের একটা বড় বাধা হলো- আস্থার সংকট। কিছু কোম্পানি যথাসময়ে বীমা দাবি পরিশোধ না করায় এই আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। নতুন বছরেও এই সমস্যা আমাদের বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
তিনি বলেন, এমনিতেই এখন মানুষের হাতে বিনিয়োগ করার মতো প্রয়োজনীয় অর্থের সংকট রয়েছে। এর ওপর আবার ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকটের কারণে গ্রাহকরা যথাসময়ে প্রয়োজনীয় টাকা তুলতে পারছে না। যা নতুন বীমা পলিসি ক্রয় এবং প্রিমিয়াম পরিশোধে সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। নতুন বছরেও এই সমস্যা থাকবে বলেই আমাদের কাছে প্রতীয়মান হচ্ছে।
এস এম নুরুজ্জামান বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা দেশের অর্থনীতির জন্য একটা বড় সমস্যা। নতুন বছরে আমাদের এই সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে আমরা দেখছি, বিশ্ব অর্থনীতি এখন স্থিতিশীল রয়েছে। এটি বজায় থাকলে দেশের অর্থনীতিও ইতিবাচক ধারায় প্রবাহিত হবে বলে আমরা আশা করছি। এক্ষেত্রে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই দেশের বীমা খাত সামনের দিকে এগিয়ে যাবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
বেঙ্গল ইসলামী লাইফের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এম এম মনিরুল আলম বলেন, আমরা আশা করছি ২০২৫ সালে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকবে। সেক্ষেত্রে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি বীমা খাতরেও উন্নয়ন প্রত্যাশিত। সামাজিক স্থিতিশীলতা বা মূল্যস্ফীতি তথা দ্রব্য-মূল্যের সহনশীলতা বজায় থাকলে মানুষের বিনিয়োগ আয় বাড়বে। সেক্ষেত্রে বীমা খাতে মানুষের বিনিয়োগ বাড়বে এবং এ খাতের উন্নয়ন হবে বলেই আমরা প্রত্যাশা করছি।
তিনি আরো বলেন, দেশের বীমা খাতে ব্যাংকাস্যুরেন্স চালু করা হয়েছে। কিন্তু সেটা এখনো তেমনভাবে দৃশ্যমান হয়ে ওঠেনি। আমরা আশা করছি নতুন বছরে ব্যাংকাস্যুরেন্স বীমা খাতের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে। তাছাড়া সরকার বা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা খাতের বেশ কিছু আইন ও বিধি-বিধান সংস্কারের যে উদ্যোগ নিয়েছে সেটি বাস্তবায়ন হলে ২০২৫ সালে বীমা খাতে কাজের সম্ভাবনা আরো বাড়বে এবং এ খাতের অগ্রগতি ত্বরান্বিত হবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম জিয়াউল হক বলেন, আমরা আশা করছি ২০২৫ সালে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে। সেক্ষেত্রে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হলে বীমা খাতও ঘুরে দাঁড়াবে। এরইমধ্যে বীমা কোম্পানিগুলো তাদের বিগত বছরের সমস্যাগুলোর সমাধান করে এবং ভুলগুলো শুধরে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। এক্ষেত্রে আইডিআরএ’র অভিভাবকসূলভ এবং প্রোঅ্যাক্টিভ সহযোগিতা দরকার।
তিনি আরো বলেন, আইডিআরএ’র নেতৃত্বে স্থিতিশীলতা এ খাতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একইসঙ্গে বীমা কোম্পানিগুলোর জন্য কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা বা গাইডলাইন জরুরি। এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের নেতৃত্বের স্থিতিশীলতা না থাকলে এটি বাধাগ্রস্ত হয়। তিনি বলেন, নতুন বছরে বীমা দিবস বা বীমা মেলা আয়োজন হবে কিনা সেটা আমরা এখনো বুঝতে পারছি না, যা বীমার প্রচার-প্রচারণার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে আমরা মনে করি।
রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা খালেদ মামুন বলেন, নতুন বছরে আমাদেরকে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। কারণ, রাজনৈতিক সরকার না আসা পর্যন্ত নতুন বিনিয়োগ কম হবে। নতুন করে কোন কল-কারখানা স্থাপন হবে না। আর নতুন বিনিয়োগ না আসলে বীমা ব্যবসাও কমে যাবে।
তিনি বলেন, বীমার জন্য নতুন বিনিয়োগ বা নতুন উদ্যোগ প্রয়োজন। আর বিনিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সরকার বা দীর্ঘ মেয়াদের সরকার প্রয়োজন। কারণ, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘ মেয়াদে নিশ্চয়তা দিতে পারে দীর্ঘ মেয়াদের সরকার। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক সরকার কবে গঠন হবে তা আমরা কেউই নিশ্চিত নই।
খালেদ মামুন বলেন, মটর বীমার বাধ্যবাধকতা না থাকায় নন-লাইফ বীমার ব্যবসা এখন অনেকটাই কমে গেছে। তার ওপর এখন মানুষের বাড়ি-গাড়ি কেনাও প্রায় বন্ধ। কমে গেছে এলসি খোলাও। এ ছাড়াও নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর জন্য স্বাস্থ্য বীমার ক্ষেত্রে একটি বড় সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু ভ্যাট এবং হসপিটালগুলোতে অনিয়মের কারণে এ খাতেও সফল হতে পারছে না কোম্পানিগুলো।
এসব সমস্যা সমাধান করতে পারলেই বীমা খাত এগিয়ে যাওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা তৈরি হবে বলে আমরা মনে করি, বলেন রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা খালেদ মামুন।
ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হাসান তারেক বলেন, ২০২৫ সালে বীমা খাতের জন্য আমরা বড় যেসব সমস্যা দেখছি তা মূলত আগে থেকেই বিদ্যমান। বিশেষ করে ডলার সংকট বা বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহে ঘাটতি। এ কারণে আমদানীকারক প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংকে এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) খুলতে পারছে না। যার কারণে বীমা কোম্পানিগুলোর ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি নেই।
তিনি বলেন, বাধ্যতামূলক বীমার আওতা বাড়ানোর জন্য আমরা সরকারের কাছে বিআইএ’র মাধ্যমে দীর্ঘ দিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু এখনো তার কোন বাস্তবায়ন আমরা দেখতে পাচ্ছি না। বড় বড় ভবন নির্মাণ হচ্ছে কিন্তু সেগুলোর কোন বীমা নেই। বাধ্যবাধকতা থাকলে এসব ভবনের বীমা হতো। এতে বীমা কোম্পানিগুলো যেমন লাভবান হতো তেমনি সরকারের রাজস্ব আয়ও বাড়ত।
হাসান তারেক বলেন, বীমার আওতা তো বাড়ানো হয়নি, উল্টো মটর ইন্স্যুরেন্স নামে পরিচিত এ্যাক্ট লায়াবিলিটি ইন্স্যুরেন্সের বাধ্যবাধকতাও সরকার তুলে নিয়েছে। এ কারণে নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি থমকে আছে। আমরা মনে করি, কমপেনসেশন বাড়িয়ে দ্রুত এ্যাক্ট লায়াবিলিটি ইন্স্যুরেন্স পুনরায় বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।
Posted ৯:৩৮ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০২ জানুয়ারি ২০২৫
bankbimarkhobor.com | Mr. Islam