বৃহস্পতিবার ১৪ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

শেখ কবির পরিবারের বলয় থেকে মুক্ত হয়নি সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স

  |   বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫   |   প্রিন্ট   |   72 বার পঠিত

শেখ কবির পরিবারের বলয় থেকে মুক্ত হয়নি সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স

শেখ কবির পরিবারের বলয় থেকে মুক্ত হয়নি সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স

গত বছর ৫ আগস্টের পর আর্থিক খাতের নানান পরিবর্তন হলেও সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্সের কোন পরিবর্তন আসেনি। উল্টা ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসনে মত্ত সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড। শেখ কবির চেয়ারম্যান না থেকেও যেভাবে কোম্পানির অর্থ অপচয় করছেন তাতে কোম্পানির ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে তা বলা-ই বাহুল্য। শেখ কবিরের ছেলে শেখ মোসাদ্দেক কবির, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক যার বেতন মাসে ২ লাখ টাকা এবং তিনি সোনার বাংলা ক্যাপিটাল থেকেও ৮০ হাজার টাকা বেতন নেন। কিন্তু এ খাতে তার অভিজ্ঞতা নিয়ে রয়েছে নানান বিতর্ক। সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স-এর লিগাল এ্যাডভাইজার হিসাবে নিযুক্ত আছেন শেখ কবিরের আরেক ছেলে এ্যাডভোকেট শেখ মুসাফেক কবির যার বেতন প্রায় ৫০ হাজার টাকার বেশি। শেখ কবিরের ব্যক্তিগত সহকারী সুমিত বেতন নেন প্রায় ৪০ হাজার টাকা। শেখ কবিরের ভাই শেখ কামরুল ইসলাম বিটু বিজয়নগর শাখার ইনচার্জ যার মাসিক বেতন ৭০ হাজার টাকার মত। ৫ আগস্টের পর তিনি পলাতক থাকলেও তার বেতন নিয়মিত রয়েছে। শেখ কবিরের গাড়িচালক নজরুল মাসিক বেতন নেন ২৫ হাজার টাকা এবং শেখ কবির চেয়ারম্যান থাকাকালীন যে প্রাডো গাড়িতে চড়তেন তা এখনও তার দখলে রয়েছে যার দাম প্রায় ২ কোটি টাকা। এ ব্যাপারে শেখ কবিরের ছেলে মোসাদ্দেক কবিরের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। এভাবেই দূর্নীতি আর স্বজনপ্রীতির মধ্যেই চলছে সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি।

এছাড়া সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্সের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থাও ডুবুডুবু। প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন বছরের প্রতিবেদন বিশ্লেষনে দেখা যায় সোনার বাংলা ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট-এর ইনভেস্ট ইনকাম, ক্যাশট্রোতে ইনভেস্টিং অ্যাকটিভিটিজে না দেখিয়ে অপারেটিং অ্যাকটিভিটিজে দেখিয়ে অবৈধভাবে নেট অপারেটিং ক্যাশট্রো পার শেয়ার (এনওসিএফএস) বৃদ্ধি করে দেখানো হয়েছে। এনওসিএফএস বৃদ্ধির ফলে সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর ওঠানামার কারসাজির অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া, বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্সের বিরুদ্ধে অডিটর জি কিবরিয়া অ্যান্ড কোং, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস কোয়ালিফাইড অপিনিয়ন দিতে বাধ্য হয়। আরেকটি বিশ্লেষনে দেখা যায়, সোনার বাংলা ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের শেয়ার মানি ডিপোজিটের বিপরীতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেয়ার ইস্যু না করে এফআরসির আইন লঙ্ঘন করেছেন। এফআরসি প্রজ্ঞাপন নং ১৪৬/এফআরসি/প্রশাঃ/প্রজ্ঞাপন/২০২৩/০১ মোতাবেক ফিন্যান্সিয়াল রিপোটিং আইন ২০১৫ এর ধারা ২(৮) এ উল্লেখিত শেয়ার মানি ডিপোজিট লেনদেনের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত গাইড লাইনে স্পষ্ট করে বলা হয়, শেয়ার মানি ডিপোজিটের টাকা বিনিয়োগকারীদের মাঝে শেয়ার হিসেবে ৬ মাসের মধ্যে শেয়ার মূলধনে রূপান্তরিত করতে হবে। কিন্তু সোনার বাংলা ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট সেই অর্থ ৬ মাস অতিবাহিত হলেও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেয়ার ইস্যু না করে এফআরসির আইন ভঙ্গ করেছে। ধারাবাহিকভাবে এমন আইন বিরুদ্ধ কর্মকাণ্ডের জন্য চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস ফার্ম এ ব্যাপারেও কোয়ালিফাইড অপিনিয়ন দেন।

সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স সিকিউরিটিজ লিমিটেড-এর অথরাইজড ক্যাপিটাল ১০ কোটি টাকা, পরিশোধিত মূলধন ৫ কোটি টাকা, সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স-এর রয়েচে ৫২ শতাংশ, অর্থাৎ ২৬ লাখ শেয়ারের বিপরীতে টাকা জমা হওয়ার কথা ছিল ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা, দেখা যায় সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স ৫২ লাখ টাকা কম জমা দিয়েছে। একইভাবে ৪ জন পরিচালক যারা কোম্পানির বাকি ৪৮ শতাংশ শেয়ারের মালিক। তাদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, ২৪ লাখ শেয়ারের বিপরীতে টাকা জমা দেওয়ার কথা ছিলো ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। তারাও ৪৮ লাখ টাকা কম জমা দিয়েছে। এদের মধ্যে শেখ মোসাদ্দেক কবির (সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্সের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক), জাহাঙ্গির আলামিন, মাহফুজুর রহমান মিতা (সাবেক এমপি), সাজিদ আজাদ (একে আজাদের ছেলে) প্রত্যেকের ৬০ লাখ টাকার শেয়ারের বিপরীতে জমা ৪৮ লাখ টাকা করে অর্থাৎ ১২ লাখ টাকা করে কম জমা দিয়েছেন। এটা আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

সোনার বাংলা ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের শেয়ার মালিকানায় কেলেঙ্কারি:
সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্সের কয়েক বছরের বার্ষিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৮ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন পৃষ্ঠা নং ১২৭-এ সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার মালিকানায় মিসেস মাসুদা কবিরের (শেখ কবিরের স্ত্রী) নামে শেয়ারের পরিমাণ ৭.৮০ শতাংশ ও শেখ কবির হোসেনের শেয়ার এর পরিমাণ ২ শতাংশ। পরবর্তী বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে পৃষ্ঠা নং-১৪০, ১৪১ একই প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ধারণে দেখা যায় শুধু মাসুদা কবিরের শেয়ার ধারণের পরিমাণ ৯.৮০ শতাংশ। ২০১৯ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে শেখ কবির হোসেনের নামে কোন শেয়ার ধারণের চিত্র পাওয়া যায়নি। আবার পরবর্তী বছর অর্থাৎ ২০২০ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে পৃষ্ঠা নং ১৪৬ শেয়ার মালিকানায় মাসুদা কবিরের নামে ৭.৮০ শতাংশ এবং শেখ কবির হোসেনের নামে ২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। এভাবে শেখ কবির হোসেন ও মাসুদা কবিরের নামে শেয়ার হাতবদলের গোলক ধাঁধায় ফেলেছেন বিনিয়োগকারীদের। এছাড়া ২০২১ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন একই প্রতিষ্ঠানের শেয়ার মালিকানায় এবার যোগ হয় একই পরিবারের সদস্য ও সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্সের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মোসাদ্দেক কবির। প্রতিবেদনে দেখা যায়, মাসুদা কবিরের শেয়ারের পরিমাণ ৭ শতাংশ, শেখ কবির হোসেন ২ শতাংশ ও শেখ মোসাদ্দেক কবিরের মালিকানায় দেখানো হয়েছে ০.৮০ শতাংশ। এখানে ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের শেয়ারমূল্য পরিশোধেও করা হয়েছে বড় ধরনের গরমিল। ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠানটির শেখ কবির হোসেনের ২ শতাংশ অর্থাৎ ৩০ হাজার ৮০০ শেয়ারের বিপরীতে টাকা জমা দেখানো হয়েছে ৩০ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং একই সালে অতিরিক্ত ১৫ হাজার শেয়ারের জন্য শেয়ার মানি ডিপোজিট দেখানো হয় ১৫ লাখ টাকা।

২০২১ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, শেখ কবির হোসেনের শেয়ার মালিকানায় রয়েছে ৫০ হাজার শেয়ার যার মূল্য ৫০ লাখ টাকা। প্রকৃতপক্ষে শেখ কবির হোসেনের শেয়ারের পরিমাণ ছিল ৪৫ হাজার ৮০০টি। যার মূল্য তিনি ২০২০ সালেই পরিশোধ করেছেন। ২০২১ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা কম জমা দিয়েও তিনি ৫০ লাখ টাকার শেয়ারের মালিক দেখানো হয় যা সরাসরি আইন লঙ্ঘন। টাকা ডিপোজিট না করেও কীভাবে শেয়ার ধারণ করে মালিকানা নিয়েছেন তা দেখে বিনিয়োগকারীরা আতংকে রয়েছেন। আইন পরিপালন না করার কারণে ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির আইপিও কোটা স্থগিত করেছে বিএসইসি। ইতিপূর্বে প্রতিষ্ঠানটির কয়েকটি অনিয়ম যেমন, মূল প্রতিষ্ঠান থেকে সাবসিডিয়ারি দুই প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন-ভাতা গ্রহণ, শেয়ার মানি ডিপোজিটের টাকা শেয়ারে রূপান্তর না করা, অবৈধভাবে বেতন-ভাতা গ্রহণ, কারসাজির মাধ্যমে শেয়ারের দর বৃদ্ধি, এফআরসির আইন লঙ্ঘন, বিএসইসির আইন লঙ্ঘনের ঘটনা রয়েছে যা অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত বলছেন স্টেকহোল্ডাররা। এতে মূল কোম্পানি সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্সের আর্থিক ভিত দুর্বল হওয়ার পাশাপাশি ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা করছেন গ্রাহক ও বিনিয়োগকারীরা।

 

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৪:৫৪ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫

bankbimarkhobor.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

[abm_bangladesh_map]
advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক
মোঃ ইসলাম শেখ
কার্যালয়

৭৯, সিদ্ধেশ্বরী সার্কুলার রোড, (৩য় তলা, বাম দিক), সিদ্ধেশ্বরী, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭

01760742336

[email protected]