বৃহস্পতিবার ১৪ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

ইআরএফের সঙ্গে বৈঠকে গভর্নর

অর্থনীতি ডেস্ক   |   মঙ্গলবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৩   |   প্রিন্ট   |   103 বার পঠিত

ইআরএফের সঙ্গে বৈঠকে গভর্নর

সংগৃহীত ছবি

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে দেশের অভ্যন্তরে আর এক ডলারও বিনিয়োগ করা হবে না। ইডিএফ, পায়রাবন্দর, বিমানসহ যেসব বিনিয়োগ আছে পর্যায়ক্রমে তা আদায় হচ্ছে। ফলে রিজার্ভ গণনায় আইএমএফের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব পদ্ধতির পার্থক্য অনেক কমে আসবে। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতি ও ডলার-টাকা বিনিময় হারের ওপর চাপ নির্বাচনের পর কমে আসবে এবং আগামী জুন নাগাদ পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হবে। গতকাল অর্থনৈতিক সাংবাদিকদের সংগঠন ইআরএফের সঙ্গে এক মতবিনিময়ে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।

চলমান অর্থনৈতিক সংকট নিরসনে করণীয় নির্ধারণে অর্থনীতিবিদসহ বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে বৈঠকের ধারাবাহিকতায় গতকাল আমন্ত্রণ জানানো হয় ইআরএফকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন গভর্নর। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অর্থ সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ, বাংলাদেশ ব্যাংকের চার ডেপুটি গভর্নর ও প্রধান অর্থনীতিবিদসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা। ইআরএফ সভাপতি মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মীরধা ও সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের নেতৃত্বে ইআরএফ প্রতিনিধিরা নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। বর্তমান সংকট মেটাতে অর্থ পাচার ও বেনামি ঋণ ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ, শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকসহ পুরো ব্যাংক খাতের নজরদারি জোরদারে বিভিন্ন পরামর্শ দেন তারা।

বৈঠকে গভর্নর বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও বিনিময় হারের ওপর ঊর্ধ্বমুখী চাপ কমানো এখনকার মূল চ্যালেঞ্জ। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দিক থেকে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে এটা শুধু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর নির্ভর করে না। এখানে বাজার সিন্ডিকেট আছে। বাজার তদারকিতে ঘাটতি আছে।

তিনি বলেন, অর্থনীতিতে একটি ক্রান্তিকাল যাচ্ছে, এটা সবার জানা। তাঁর ৩৬ বছরের চাকরিজীবনে এমন পরিস্থিতি দেখেননি। একটি সময় কেবল বাজেট ঘাটতি ও বৈদেশিক লেনদেনে চলতি হিসাবের ঘাটতি নিয়ে ভাবতে হতো। এর সঙ্গে গত বছরের শেষভাগ থেকে যোগ হয়েছে আর্থিক হিসাবের ঘাটতি।

গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, নির্বাচনের আগে এক ধরনের অনিশ্চয়তা থাকে। এর সঙ্গে এখন আবার হরতাল-অবরোধ যোগ হয়েছে। এক ধরনের অনিশ্চয়তা থেকে বিদেশি বিনিয়োগ প্রায় শূন্যে নেমেছে। স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ ও বাণিজ্যিক ঋণ কমেছে। আবার উন্নয়ন সহযোগীরা অর্থছাড়ে দেরি করছে। তবে এসব সংকট নির্বাচনের পর কেটে যাবে। তাঁর ভাষায়, ‘আমরা এখন টানেলের শেষ প্রান্তে আছি। আলো দেখতে পাচ্ছি। আগামী বছরের জুনের মধ্যে পরিস্থিতি ভালোর দিকে যাবে। তখন আর্থিক হিসাবের উদ্বৃত্ত হবে।’

গভর্নর বলেন, আগামী ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে এবং আগামী জুনে সাড়ে ৬ শতাংশে নামানোর যে লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে, তা পূরণ হবে বলে তিনি আশাবাদী। সুদহার এক ধরনের বাজারভিত্তিক হয়ে গেছে। শিগগির বিনিময় হার ব্যবস্থাও বাজারভিত্তিক হয়ে যাবে। তবে বর্তমান বাস্তবতায় ডলারের দর পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দিলে দর কোথায় গিয়ে ঠেকবে কেউ জানে না।

আব্দুর রউফ তালুকদার আরও বলেন, এটা স্বীকার করতে হবে, অর্থ পাচার খুব খারাপ অবস্থায় পৌঁছেছিল। হুন্ডির মাধ্যমে যে পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে, তার চেয়ে ১০ গুণ হয়েছে বাণিজ্যের আড়ালে। তবে এলসি তদারকির মাধ্যমে এরই মধ্যে ওভার ইনভয়েসিং কমানো গেছে। তিনি বলেন, দুবাইয়ে ১৩ হাজার বাংলাদেশি কোম্পানি খুলেছে। পর্তুগালে আড়াই হাজার বাংলাদেশি নাগরিকত্ব নিয়েছে। এ ধরনের বিনিয়োগ বাংলাদেশ থেকে পাচার করেই হয়েছে। তাঁর মতে, বাণিজ্যের আড়ালে এখন পাচার অনেক কমে এসেছে। আগে প্রতি মাসে যে ৮ বিলিয়নের মতো এলসি খোলা হতো, তার দেড় বিলিয়নই ছিল ওভার ইনভয়েসিং।

তিনি বলেন, আইএমএফও বলেছে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির কাঠামো ঠিক আছে। যে কারণে দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের বিষয়ে তারা সম্মত। আগামী ১২ ডিসেম্বর আইএমএফের পরিচালনা পর্ষদের সভার পরদিন ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড় হবে। তিনি জানান, আইএমএফ যেসব বিষয় রিজার্ভ হিসেবে বিবেচনায় নেয় না, তার পরিমাণ এক সময় ৮ বিলিয়ন ছিল। এরই মধ্যে তা কমিয়ে ৫ বিলিয়ন ডলারে নামানো হয়েছে। ৭ বিলিয়ন থেকে ইডিএফ কমিয়ে সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলারে নামানো হয়েছে। সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে বিমানকে দেওয়া ৪০ কোটি ডলার থেকে প্রতি মাসে ১ কোটি ডলার করে ফেরত আসছে। এভাবে এক পর্যায়ে এসব কিছুই থাকবে না। তখন আইএমএফের হিসাবের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে কোনো পার্থক্য থাকবে না।

অর্থ সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার বলেন, প্রবৃদ্ধির চেয়ে এখন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। আগামী ডিসেম্বর নাগাদ মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা অন্যতম লক্ষ্য। এ জন্য মুদ্রানীতি ও আর্থিক নীতির মধ্যে সমন্বয় করে কাজ করা হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য অর্থ সরবরাহ কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকার খরচ কমাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ বলেন, বর্তমানের সংকট শুধু বাংলাদেশের নয়, সারা বিশ্বের। সমন্বিত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ভালো কিছু করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে এটি বুঝতে হবে, আর্থিক খাতে আজ কোনো সিদ্ধান্ত নিলে কালই তার প্রভাব বোঝা যাবে, তেমন নয়। দৃশ্যমান হতে সময় লাগবে।

মূল প্রবন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. হাবিবুর রহমান বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বিনিময় হার স্থিতিশীল করা এবং খেলাপি ঋণ কমানোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিনিময় হার স্থিতিশীল করতে চাহিদা কমানো ও সরবরাহ বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এলসি কমানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারকে এখন সরাসরি ঋণ দিচ্ছে না। আগামী ডিসেম্বরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বিপিএম৬ অনুযায়ী ২৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে বলে তিনি আশা করেন। বর্তমানে যা ২০ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলারে রয়েছে। খেলাপি ঋণ কমাতে এরই মধ্যে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ২:০২ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৩

bankbimarkhobor.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

[abm_bangladesh_map]
advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক
মোঃ ইসলাম শেখ
কার্যালয়

৭৯, সিদ্ধেশ্বরী সার্কুলার রোড, (৩য় তলা, বাম দিক), সিদ্ধেশ্বরী, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭

01760742336

[email protected]