শুক্রবার ১৫ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩১শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

রপ্তানির ২৯ গুণ আমদানি

অর্থনীতি ডেস্ক   |   বুধবার, ১০ জুলাই ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   54 বার পঠিত

সংগৃহীত ছবি

গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে পরিমাণের দিক থেকে চীন ও ভিয়েতনামকে ছাড়িয়ে শীর্ষে উঠে আসে বাংলাদেশ। তবে এই বিপুল পরিমাণ পোশাক উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামালের বড় অংশই আমদানি করতে হয়। আমদানির উৎস হিসেবে চীনের অবস্থান নিরঙ্কুশ। মোট কাঁচামালের প্রায় অর্ধেক আসে দেশটি থেকে। বাকিটা আমদানি হয় অন্যান্য দেশ থেকে। বিশেষ করে ওভেন পোশাকের সুতা-কাপড়ের ক্ষেত্রে চীনের চেয়ে ভালো কোনো বিকল্প এখনও তৈরি হয়নি। ওভেনের সুতা-কাপড়ের ৭০ শতাংশই আমদানি করতে হয়।
গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে চীন থেকে ১ হাজার ৯৮১ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে। দেশটিতে বাংলাদেশের রপ্তানি ছিল ৬৮ কোটি ডলারের কম। সে হিসাবে, বাণিজ্য ঘাটতি ১ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের বেশি। বাংলাদেশ চীনে যে পরিমাণ রপ্তানি করে তার প্রায় ২৯ গুণ বেশি আমদানি করে দেশটি থেকে।

বাংলাদেশে ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২১-২২ অর্থবছরে পোশাক উৎপাদনে মোট এক হাজার ৫৮০ কোটি ডলার মূল্যের বিভিন্ন ধরনের কাঁচামাল আমদানি হয়। এর মধ্যে ৬৬১ কোটি ৩৪ লাখ ডলারের আমদানি হয় চীন থেকে। মোট কাঁচামাল আমদানির যা ৪২ শতাংশের মতো। প্রায় ২৯ শতাংশ কাঁচামাল এসেছে ভারত থেকে। বাকিটা পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশ থেকে আনা হয়েছে।
কাঁচামালে চীননির্ভরতা সম্পর্কে জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি এস এম মান্নান কচি বলেন, ওভেন পোশাকের পশ্চাৎসংযোগ শিল্পের বড় ধরনের ঘাটতি আছে দেশে। আমদানির মাধ্যমেই চাহিদা মেটাতে হয়। সুতা, কাপড়সহ অন্য কাঁচামালের উৎস হিসেবে চীনের ভালো কোনো বিকল্প এখনও তৈরি হয়নি। ২০৩০ সাল নাগাদ তৈরি পোশাকে ১০০ কোটি ডলার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এক্ষেত্রে কাঁচামাল সরবরাহে চীননির্ভরতা আরও ব্যাপক হারে বাড়তে পারে।

চীনে বাংলাদেশের রপ্তানির চিত্র আমদানির ঠিক বিপরীত। দীর্ঘ দিন ধরে সম্ভাবনার মধ্যেই সীমিত রয়েছে চীনে রপ্তানি। বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যান বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশটিতে রপ্তানি হয়েছে ৬৭ কোটি ৭০ লাখ ডলারের পণ্য। আগের অর্থবছর ২০২১-২২ অর্থবছরে যা ছিল ৬৮ কোটি ৩৪ লাখ ডলার। অর্থাৎ রপ্তানি কমেছে।
সদ্য সমাপ্ত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের রপ্তানির পুরো পরিসংখ্যান এখনও প্রকাশ করেনি ইপিবি। অর্থবছরটির জুন থেকে মে পর্যন্ত সময়ে আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে চীনে রপ্তানি বেড়েছে ১৫ কোটি ডলারের মতো। ১১ মাসে চীনে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৭৬ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৬১ কোটি ডলারের মতো। অন্যদিকে বিজিএমইএ’র তথ্যমতে, ওই ১১ মাসে ৩১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে চীনে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ২৫ কোটি ডলারের কিছু বেশি। চীনে তৈরি পোশাকের বাইরে পাট ও পাটজাত পণ্য, কাকড়া, কুঁচ ও চামড়া বেশি রপ্তানি হয়ে থাকে।

পরিবেশ সুরক্ষা ইস্যুতে জোর দেওয়ায় পোশাক উৎপাদন থেকে ক্রমে সরে আসার নীতি নিয়েছে চীন। মজুরিসহ অন্যান্য ব্যয় বাড়ার কারণে সেখানকার উদ্যোক্তারাও উৎসাহ হারাচ্ছেন। এতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনে পোশাক উৎপাদন কমে এসেছে। প্রায় ১৫০ কোটি জনসংখ্যার দেশ চীন বাংলাদেশের পোশাকের অন্যতম বড় বাজার হয়ে ওঠার সুযোগ তৈরি হয়েছে। চীনে রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধাও আছে। কিন্তু দেশটিতে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রত্যাশিত মাত্রায় বাড়ছে না। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার পরিসংখ্যান বলছে, চীন প্রতিবছর যে পরিমাণ পণ্য আমদানি করে তাতে বাংলাদেশের হিস্যা মাত্র শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ।

বড় বাজার, শুল্কমুক্ত সুবিধা সত্ত্বেও কেন চীনে রপ্তানি বাড়ছে না–এ বিষয়ে বেশ কয়েকজন রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে বেশ কিছু কারণের কথা জানা গেছে। এর মধ্যে রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য বিরোধ এবং করোনা অতিমারির পর আমদানি-রপ্তানি কমিয়েছে চীন। উৎপাদিত পণ্যে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়েছে তারা। এ কারণে শুল্কমুক্ত সুবিধা সত্ত্বেও বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়েনি।
ডেনিম এক্সপার্ট এবং বিজিএমইএ’র পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, আগামীতে শুল্কমুক্ত সুবিধায় চীনই হতে পারে বাংলাদেশের পণ্যের প্রধান গন্তব্য। একক রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে বেশি রপ্তানি করে বাংলাদেশ। ক্রমেই এ স্থান দখল করতে পারে চীন।

রপ্তানি বাড়াতে করণীয় কী জানতে চাইলে বাংলাদেশ-চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিসিসিআই) মহাসচিব আল মামুন মৃধা বলেন, চীনে রপ্তানি বাড়াতে দীর্ঘমেয়াদি কর্মকৌশল নেওয়া প্রয়োজন। চীনের পক্ষ থেকে দ্বিপক্ষীয় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করার বেশ আগ্রহ আছে। শেষ পর্যন্ত এফটিএ না হলে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) করা যেতে পারে। সেটিও না হলে রিজিওনাল কমপ্রিহেনসিভ পার্টনারশিপে (আরসিইপি) যোগ দিলেও চীনে বাংলাদেশের রপ্তানি অনেক বাড়তে পারে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৬:১৭ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ১০ জুলাই ২০২৪

bankbimarkhobor.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

[abm_bangladesh_map]
advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক
মোঃ ইসলাম শেখ
কার্যালয়

৭৯, সিদ্ধেশ্বরী সার্কুলার রোড, (৩য় তলা, বাম দিক), সিদ্ধেশ্বরী, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭

01760742336

[email protected]