
| রবিবার, ১০ আগস্ট ২০২৫ | প্রিন্ট | 27 বার পঠিত
প্রণোদনা ৪-৫ শতাংশে উন্নীত করলে ৯৫% রেমিট্যান্স চলে আসবে ব্যাংকিং চ্যানেলে
প্রবাসীরা দেশে শুধু টাকা পাঠান না, এটা জাতির প্রতি তাদের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার বহিঃপ্রকাশ। এটা অর্থনীতির সাহস ও শক্তি হিসেবে কাজ করে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রবাসীরা ড্রাইভিং সিটে বসে কাজ করছেন। বাংলাদেশ যে আজ বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে এবং শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে তার মূলে কাজটা কিন্তু করেছেন প্রবাসীরা। তাদের নিরলস শ্রম ও আত্মত্যাগের কারণেই আজ এ অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছি। প্রবাসীদের সম্মান, তাদের পরিবারের আর্থিক নিরাপত্তা ও কষ্টার্জিত উপার্জনের বিষয়টি মাথায় রেখে প্রাইম এক্সচেঞ্জ লিমিটেড সেবা দিয়ে যাচ্ছে। আগামীতে এ সেবা আরো প্রসারিত হবে। কীভাবে প্রবাসীদের দোরগোড়ায় এ সেবা পৌঁছে দেয়া যায় সে চেষ্টাই আমরা করে যাচ্ছি।
প্রাইম ব্যাংক পিএলসির একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রাইম এক্সচেঞ্জ লিমিটেড, সিঙ্গাপুর ২০০৬ সালে কার্যক্রম শুরু করে। প্রায় ১৯ বছর ধরে সিঙ্গাপুরে আমরা সাফল্যের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। বর্তমানে সিঙ্গাপুরে আমাদের এক্সচেঞ্জের তিনটি শাখা রয়েছে। এখান থেকে বাংলাদেশে যে রেমিট্যান্স যায়, তার ২০-২২ শতাংশ হিস্যা আমাদের। শুধু বাংলাদেশই নয়, আমরা ভারত, ফিলিপাইনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে থাকি। তবে বাংলাদেশের বাজারেই আমাদের হিস্যা সবচেয়ে বেশি।
একজন প্রবাসী দেশে একাধিক অ্যাকাউন্টে রেমিট্যান্স পাঠান। আবার রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে কিছু প্রবাসী এখানকার একাধিক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেন। এ কারণে আমাদের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানো প্রবাসীদের সংখ্যা সুনির্দিষ্টভাবে বলা কঠিন। আমাদের গড় লেনদেনের পরিমাণ ১১০০-১২০০ সিঙ্গাপুরি ডলার হয়ে থাকে। খুব কম খরচে আমরা সিঙ্গাপুর থেকে রেমিট্যান্স পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি। ১৯ বছর ধরেই আমরা রেমিট্যান্স পাঠানোর চার্জ মাত্র ৫ ডলার রাখছি। যেটি বিশ্বের সবচেয়ে কম খরচ। যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনো দেশ থেকে রেমিট্যান্স পাঠালে সেটি ১০-১৫ ডলার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এটা টাকার পরিমাণের ওপর নির্ভর করে। কিন্তু প্রাইম এক্সচেঞ্জ সিঙ্গাপুর থেকে মাত্র ৫ ডলারে এ সেবা দিয়ে আসছে এবং এটি সুনির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে।
সিঙ্গাপুর প্রবাসীদের জন্য আমরা একটি মোবাইল অ্যাপ চালু করেছি। এর মাধ্যমে প্রবাসীরা খুব সহজে তাদের রেমিট্যান্স পাঠাতে পারেন। এক্ষেত্রে চার্জ মাত্র ২ ডলার। সিঙ্গাপুরে বর্তমানে ১ লাখ ৩০ থেকে ১ লাখ ৩৫ হাজার বাংলাদেশী বসবাস করছেন। যাদের মধ্যে ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশই ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠান। তবে এ হার ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর অনেক বেড়েছে। প্রবাসীরা এখন ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানোয় বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এর ইতিবাচক ফলাফল বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে দেখা যাচ্ছে। শুধু সিঙ্গাপুর নয়, বিশ্বের সব জায়গা থেকেই ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোর আগ্রহ বেড়েছে। প্রবাসীদের বৈধপথে টাকা পাঠানোর জন্য আমরা বিভিন্নভাবে উৎসাহ দিচ্ছি। তাদের ফ্রিতে আর্থিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত পরামর্শ দিই। তাদের সেভিংস অ্যাকাউন্ট, ডিপোজিটসহ অন্য অ্যাকাউন্টগুলো বিনা খরচে আমরা করে থাকি। যেটি সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশী ব্যাংক হিসেবে একমাত্র আমরাই করছি। আমাদের কল সেন্টার সেবাও রয়েছে। বৈধপথে রেমিট্যান্স বাড়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকারদের ভূমিকাও রয়েছে। তারা প্রবাসীদের অনেক বেশি সহায়তা করছেন, যোগাযোগ রাখছেন।
রেমিট্যান্স ঘিরে হুন্ডির তৎপরতা নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। তবে আমি মনে করি, সিঙ্গাপুরে হুন্ডির তৎপরতা অনেক কম। গত বছরের ৫ আগস্টের পর এটি আরো কমে এসেছে। বাংলাদেশ সরকার রেমিট্যান্সের ওপর ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে। এটি আরো বাড়ানো দরকার। দেশের রফতানিকারকরা ১০ শতাংশ পর্যন্ত প্রণোদনা পান। রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে প্রণোদনার হার ৪-৫ শতাংশ উন্নীত করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস, প্রণোদনা বাড়লে ৯৫ শতাংশ রেমিট্যান্স ব্যাংকিং চ্যানেলে চলে আসবে।
দেশে সরকারের পক্ষ থেকে প্রবাসীদের ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠাতে এবং হুন্ডিকে নিরুৎসাহিত করতে বিভিন্ন ধরনের প্রচারণা চালানো হয়। এগুলো আরো বাড়ানো প্রয়োজন। এছাড়া বিমানবন্দরে প্রবাসী লাউঞ্জ, বিভিন্ন প্রণোদনাসহ তাদের সুযোগ-সুবিধা এবং রাষ্ট্রে তাদের আরো বেশি সম্মান দেয়া প্রয়োজন। এতে তারা ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠাতে আরো বেশি আগ্রহী হবেন।
Posted ৪:৫৫ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১০ আগস্ট ২০২৫
bankbimarkhobor.com | Mr. Islam