বুধবার ১৩ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভারতে ক্রয়াদেশ স্থগিত করছে ওয়ালমার্ট-অ্যামাজনসহ বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলো

  |   শনিবার, ০৯ আগস্ট ২০২৫   |   প্রিন্ট   |   29 বার পঠিত

ভারতে ক্রয়াদেশ স্থগিত করছে ওয়ালমার্ট-অ্যামাজনসহ বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলো

ভারতে ক্রয়াদেশ স্থগিত করছে ওয়ালমার্ট-অ্যামাজনসহ বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলো

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত দ্বিগুণ শুল্কের ধাক্কায় ভারতীয় তৈরি পোশাক খাত বড় ধরনের সংকটে পড়েছে। ওয়ালমার্ট, অ্যামাজন, টার্গেট, গ্যাপসহ যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় খুচরা বিক্রেতারা ভারতীয় সরবরাহকারীদের দেয়া পোশাকের ক্রয়াদেশ স্থগিত করা শুরু করেছে। ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণা আসার পর থেকে একের পর এক ভারতীয় রফতানিকারক ই-মেইল পাচ্ছেন মার্কিন ক্রেতাদের কাছ থেকে। যেখানে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ক্রয়াদেশ স্থগিত রাখাতে বলা হচ্ছে।

ঘটনার সূত্রপাত ৬ আগস্ট, যখন ট্রাম্প প্রশাসন ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্কের পাশাপাশি আরো ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল কেনার মাধ্যমে ভারত ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার অর্থনীতিকে সহায়তা করছে। ফলে মোট শুল্ক দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশে, যা বর্তমানে মার্কিন বাজারে ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি।

শিল্পসূত্রগুলোর বরাতে এনডিটিভি জানাচ্ছে, মার্কিন ক্রেতারা এ অতিরিক্ত ব্যয়ের ভার নিতে রাজি নন। বরং তারা চাইছেন ভারতীয় রফতানিকারকরাই এ খরচ বহন করুক। তামিলনাড়ুর তিরুপপুরের এক পোশাক প্রস্তুতকারক এনডিটিভিকে বলেন, ‘তার মার্কিন ক্রেতা ৮০ হাজার ডলারের একটি কটন টি-শার্ট ও ড্রেসের চালান থামিয়ে দিতে বলেছেন, কারণ অতিরিক্ত খরচ চূড়ান্ত ক্রেতাদের ওপর চাপানো সম্ভব হবে না। তারা মূলত দাম কমিয়ে দেয়ার দাবি তুলেছেন।’

প্রভাব শুধু পোশাকেই সীমাবদ্ধ নয়। শিল্প বিশ্লেষকদের মতে, দ্বিগুণ শুল্ক কার্যকর হলে ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানির খরচ ৩০-৩৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যাবে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রমুখী অর্ডার ৪০-৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে, যা ভারতের জন্য কয়েক বিলিয়ন ডলারের ক্ষতির কারণ হতে পারে। ভারতের প্রধান রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান যেমন ওয়েলস্পুন লিভিং, গোকলদাস এক্সপোর্টস, ইন্দো কাউন্ট ও ট্রাইডেন্ট—এরা মোট রফতানির ৪০-৭০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রে পাঠায়।

যুক্তরাষ্ট্র ভারতের তৈরি পোশাক ও বস্ত্রশিল্পের সবচেয়ে বড় বাজার। গত অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের পোশাক রফতানি হয়েছিল ৪ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার মূল্যের। কিন্তু শুল্ক বাড়ার ফলে এ অর্ডার বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের দিকে সরে যেতে পারে। কারণ এ দুই দেশ যুক্তরাষ্ট্রে ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্কের আওতায় আছে, যা ভারতের নতুন ৫০ শতাংশ হারের তুলনায় অনেক কম।

ভারতের টেক্সটাইল ও অ্যাপারেল শিল্পের প্রতিনিধিত্বকারী কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি (সিআইটিআই) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, কার্যকর ৫০ শতাংশ শুল্ক ভারতের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়। ৬ আগস্ট ঘোষিত মার্কিন শুল্ক ভারতের বস্ত্র ও পোশাক রফতানিকারকদের জন্য বড় ধাক্কা। আমরা এমনিতেই প্রতিযোগিতামূলক চাপে ছিলাম, নতুন শুল্ক আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের প্রতিযোগিতা আরো কমিয়ে দেবে।

এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন ক্রেতারা এখন বিকল্প সরবরাহকারী খুঁজছেন, যাদের দেশে শুল্কহার কম। এর মধ্যে বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, এমনকি মধ্য আমেরিকার কিছু দেশও সম্ভাব্য লাভবান হতে পারে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কবান্ধব চুক্তি থাকা দেশগুলোর প্রতি ঝোঁক বাড়বে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ভারতের পোশাক রফতানি খাত শুধু বাজার হারানোর ঝুঁকিতে নেই, বরং কর্মসংস্থানের ওপরও প্রভাব পড়তে পারে। কারণ এ শিল্পে কয়েক কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। বড় ক্রেতারা যখন অর্ডার কমিয়ে দেবে বা সরিয়ে নেবে, তখন বহু কারখানাকে উৎপাদন কমাতে বা বন্ধ করতে বাধ্য হতে হবে।

এনডিটিভি বলছে, সব মিলিয়ে, ওয়ালমার্ট, অ্যামাজন, টার্গেট ও গ্যাপের মতো ক্রেতাদের অর্ডার স্থগিতের এ ধাক্কা ভারতের তৈরি পোশাক শিল্পকে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। শুল্ক-সংকট কাটিয়ে উঠতে না পারলে, ভারত শুধু মার্কিন বাজার হারাবে না বরং এশিয়ার বাণিজ্য প্রতিযোগিতায়ও পিছিয়ে পড়বে।

 

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৬:৩৮ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ০৯ আগস্ট ২০২৫

bankbimarkhobor.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

[abm_bangladesh_map]
advertisement
advertisement
advertisement
সম্পাদক
মোঃ ইসলাম শেখ
কার্যালয়

৭৯, সিদ্ধেশ্বরী সার্কুলার রোড, (৩য় তলা, বাম দিক), সিদ্ধেশ্বরী, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭

01760742336

[email protected]